দুমাসেও হাতে আসেনি সব বই, চিন্তিত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা

নতুন বছরের দুই মাসেও সব বই পায়নি বেশ কয়েকটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। বইয়ের অভাবে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় চিন্তিত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। কাগজ সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বই ছাপানো যাচ্ছে না বলে দাবি মুদ্রণ সমিতির। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, কিছু ছাপাখানা নোট-গাইড ছাপানোয় সময়মতো মিলছে না বই।

বই না পাওয়ায় ছন্দহীন শিক্ষক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গন। নতুন বই পেতে অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছে না। বছরের শুরুটাই বই ছাড়া কেটে যাওয়ায় পড়াশোনায় মনযোগ দিতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, পাঠ্যবই সরবরাহের ক্ষেত্রে বেশি পিছিয়ে আছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মতিঝিল সরকারি বালক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, নবম শ্রেণির একটি বইও শিক্ষার্থীরা পায়নি। তারা পুরোনো বই দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ১৩টি বইয়ের মধ্যে ৩টি পেয়েছে।

এনসিটিবি সূত্র বলছে, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরে মোট ৪ কোটি শিক্ষার্থী আছে। মাধ্যমিকে বইয়ের সংখ্যা ৩০ কোটি ৯৬ লাখ, ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সরবরাহ করা গেছে ১১ কোটি ১৭ লাখ। ১৭ কোটি বই ছাপা বাকি আছে। প্রাথমিকে মোট বইয়ের সংখ্যা ৯ কোটি ১৯ লাখ। বই সরবরাহ করা গেছে ৭ কোটি ৩ লাখ। এনসিটিবি আশা করছে, ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তারা সব বই সরবরাহ করতে পারবে। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাকি বই সরবরাহ করতে পুরো ফেব্রুয়ারি মাস লেগে যাবে। এমনকি মার্চেও গড়াতে পারে।

যেসব পাঠ্যবইয়ের পাঠক্রম বদল করা হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে যদিও কর্তৃপক্ষ যুক্তি দেখাতে পারে; কিন্তু যেসব বইয়ের পাঠক্রম বদল হয়নি, সেগুলো সরবরাহ করতে কেন এত বিলম্ব হলো? প্রতিবারই দেখা যায়, এনসিটিবি কার্যাদেশ দিতে দেরি করে, আবার কোনো কোনো মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানও নানা বাহানায় সময় বাড়িয়ে নেয়। এবার কাগজের সমস্যা হয়েছে বলা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল আগে থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

দুই মাসেও কেন বই পেল না শিক্ষার্থীরা? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজের দাবি, বাজারে এনসিটিবির বেঁধে দেওয়া মানের কাগজের সংকট থাকায় যথাসময়ে বই ছাপানো যাচ্ছে না। যেসব কাগজ আসছে সেগুলো দিয়েই ছাপছি।

তবে কাগজের সংকট নেই বলে দাবি করেছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, যাতে কাগজের কৃত্রিম কোনো সংকট না হয়, আমরা ছাপাখানার সঙ্গে কাগজ আমদানিকারকদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলাম। মূলত ছাপাখানার মালিকরা আগের অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারছে না এবং চাইলেও নিম্নমানের কাগজ দিতে পারছে না।

তিনি আরও বলেন, মনে কষ্ট নিয়ে হলেও তারা আমাদের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। যার কারণে চুক্তি ভেঙে কিছু প্রেস পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ ফেলে নোট গাইড ছাপাচ্ছে। কিন্তু আমরা কোনোভাবেই ফেব্রুয়ারি পার করতে চাই না।

বই পাওয়ার আগ পর্যন্ত পিডিএফ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার পরামর্শ এনসিটিবি চেয়ারম্যানের।

Comments (0)
Add Comment