ব্রিটেনে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, করোনার লক্ষণযুক্ত কমবয়সী এবং পূর্বে থেকে সুস্থ লোকজন প্রাথমিক সংক্রমণের চার মাস পরে একাধিক অঙ্গে ক্ষতির লক্ষণ বহন করছে। প্রভাবশালী ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ান এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
বলা হচ্ছে, এই অনুসন্ধান বিস্ময়কর এবং বিস্তৃত লক্ষণযুক্ত
দীর্ঘদিন করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিদের শারীরিক কাঠামোর মুখোশ উন্মোচন এবং চিকিৎসার বিকাশের পথে এক ধাপ এগিয়ে নিলো। ধারণা করা হচ্ছে যুক্তরাজ্যে এমন ৬০,০০০ এর বেশি মানুষ ভুগবে। এদের ক্লান্তি, মস্তিষ্কের সমস্যা, স্মৃতিবিভ্রাট, শ্বাসকষ্ট এবং ব্যথার খবর সবচেয়ে বেশি আসছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়- রবিবার ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) ঘোষণা করেছে যে তারা এমন রোগীদের জন্য ৪০ টিরও বেশি বিশেষজ্ঞ ক্লিনিক চালু করবে যেখানে চিকিৎসক, নার্স এবং থেরাপিস্টরা রোগীদের শারীরিক এবং মানসিক লক্ষণগুলো মূল্যায়ন করবেন।
দ্য কাভারস্ক্যান গবেষণার লক্ষ্য ছিল প্রায় ৫০০ “নিম্ন-ঝুঁকিপূর্ণ” ব্যক্তি – যারা তুলনামূলক কম বয়সী, যাদের কোনও বড় স্বাস্থ্যগত সমস্যা নেই এবং যারা করোনার লক্ষণ বহন করে চলেছেন তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে করোনার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এমআরআই স্ক্যান, রক্ত পরীক্ষা, শারীরিক পরিমাপ এবং অনলাইনে প্রশ্ন করার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা।
প্রথম ২০০ রোগীর স্ক্রিনিংয়ের প্রাথমিক তথ্যে দেখা যায় যে প্রায় ৭০% রোগীর প্রাথমিক অসুস্থতার চার মাস পর হৃদপিন্ড, ফুসফুস, যকৃত এবং অগ্ন্যাশয় সহ এক বা একাধিক অঙ্গের ক্ষতি হয়েছে।
“সুসংবাদ হল ক্ষতির পরিমাণ অল্প, কিন্তু কনজারভেটিভ লেন্স দিয়েও কিছুটা ক্ষতি বোঝা যায় এবং ২৫% লোকের মধ্যে এটি দুই বা ততোধিক অঙ্গকে প্রভাবিত করে” হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ক্লিনিকাল ডেটা সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক অমিতাভ ব্যানার্জি যেমনটি বলছিলেন।
“এটা আগ্রহের জায়গা কারণ আমাদের জানা উচিত যে [ক্ষয়ক্ষতি] অব্যাহত থাকে নাকি উন্নতি হয় – নাকি এমন অনেকে রয়েছেন যাদের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।”
কিছু ক্ষেত্রে, তবে সবকটিতেই না, রোগীর লক্ষণ এবং তাদের অঙ্গে ক্ষতির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল। উদাহরণস্বরূপ, হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুসের ত্রুটি শ্বাসকষ্টের সাথে সম্পর্কযুক্ত, আবার লিভার বা অগ্ন্যাশয়ের বৈকল্যগুলো গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল লক্ষণের সাথে যুক্ত ছিল।
তবে, এই গবেষণা প্রমাণ করে না যে অঙ্গের-ত্রুটিগুলো মানুষের চলমান লক্ষণগুলোর কারণ এবং ডেটাটি এখনও ‘পিয়ার-রিভিউ’ করা হয়নি।
ব্যানার্জি সতর্ক করেন যে, করোনার আগে কোন রোগীকেই স্ক্যান করা হয়নি, তাই তাদের মধ্যে কারো কারো হয়তো আগে থেকেই অসুস্থতা ছিল। যদিও তাদের আগের সুস্বাস্থ্য এবং তুলনামূলকভাবে কম বয়সী হওয়ায় রেকর্ড বলছে সে সম্ভাবনা কম। অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ছিল ৪৪ বছর।
তাদের পর্যবেক্ষণ করা অব্যাহত থাকবে, এবং গবেষকরা তুলনা করার জন্য এমন লোকদেরও স্ক্যান করছেন যাদের করোনা ছিল না অথবা ফ্লুর মতো অন্যান্য ভাইরাল সংক্রমণের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
করোনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৫৮ জন রোগীকে নিয়ে করা পৃথক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য একইভাবে ৬০% এর ফুসফুসে, ২৯% এর কিডনিতে; ২৬% এর হৃদপিন্ডে এবং ১০% এর লিভারে, প্রাথমিক সংক্রমণের দুই থেকে তিন মাস পরে অস্বাভাবিকতা খুঁজে পেয়েছিল। পাশাপাশি মস্তিষ্কের অংশগুলিতে টিস্যুর পরিবর্তনও ছিল।
“দীর্ঘদিন ধরে করোনাক্রান্ত বিশ্বের সব লোক যে বিষয়টি বোঝাতে চাইছেন, তা হল এটিকে গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিত এবং অঙ্গ স্তরে কী ঘটতে পারে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়া উচিত – সুতরাং কিছু তথ্যপ্রমাণ একত্রিত করে কাজ শুরু করাটাই ভালো উপায়, ” বলছিলেন ড্যানি আল্টম্যান যিনি ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ইমিউনোলজির অধ্যাপক।