বাংলা চলচ্চিত্রের এক শুদ্ধতম শিল্পী জয়া আহসান। চলচ্চিত্রে দুই বাংলা জয় করার পর সম্প্রতি শেষ করলেন একটি হিন্দি ছবির কাজ। নিজের কাজ, নিষ্ঠা আর পরিশ্রমের সাথে তিনি যেন প্রতিনিয়ত সময়কে জয় করে চলেছেন। সম্প্রতি হিন্দি ছবি ‘পিঙ্ক’ খ্যাত নির্মাতা অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর নতুন ছবি ‘কড়ক সিং’ এর কাজ শেষ করলেন। কথা বললেন সাম্প্রতিক কাজ ও চলচ্চিত্র ভাবনা নিয়ে।
কেমন আছেন?
খুব ভাল। কাজের ভেতরে থাকলেই একটা শিল্পী ভাল থাকে। সেরকমই আছি।
যথারীতি পরের কাঙ্খিত প্রশ্নটা আপনার হিন্দি মুভি নিয়েই। সেটিই শুনতে চাই। অভিজ্ঞতাটা কেমন?
মুভিটার কাজ শেষ করলাম। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর নির্মাণ। ছবিটি সিঙ্ক সাউন্ডে কাজ হয়েছে বলে ডাবিংয়েরও প্রয়োজন নেই। তাই বলতে পারি রিলিজের আগে ছবির জন্য আমার কাজটুকু শেষ করেছি। অভিজ্ঞতা এক কথায় দারুণ!
আমরা বারবার শুনি, ওরা খুব প্রফেশনাল। খুবই নিয়মমাফিক। ঢালিউড, টলিউডের পর বলিউড প্রডাকশনের কাজ সম্পর্কে শুনতে চাই।
দেখুন। কাজ বা টীমওয়ার্ক মূলত নির্মাতার ওপরেই নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে আমি বলবো। টনি দা [নির্মাতা অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী ]’র সাথে অনেকদিন ধরেই একটা কাজের প্ল্যান হয়ে আসছিল। একটা বাংলা ছবি করবো, শুরুতে এরকম একটাই ভাবনা ছিল আমাদের। পরে টনিদাই বললেন, ‘দেখো একটি হিন্দি ছবির চরিত্র আছে। তুমি করতে পারো।’ টনিদার আগের কাজগুলোও বিশ্লেষণ করলে দেখবেন। উনার ছবিগুলো শুধু একটা নির্দিষ্ট সময়কে ধারণ করে বুনেন না। অনেকবছর পরেও তার ছবিগুলো সমসাময়িক মনে হয়। আর পেশাদার এই অর্থে আমি বলি— কারণ ওরা সময়ের কাজটা সময়েই শেষ করতে চায়। বরং নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রডাকশনটি শেষ করার একটা তাগিদ থাকে তাদের ভেতর।
হিন্দি ডায়লগ বা কাজের ক্ষেত্রে পরিবেশটা কিভাবে মানালেন—
খুব বেশি সময় পেয়েছি যে, তা নয়। কারণ বাকি পুরোটীমটাই বোম্বের ও দক্ষিণের। ওরা অনেক রিহার্সেল করেছে। তবে টনিদা’কে দেখলাম এক অদ্ভুত স্টাইল তার। তিনি আসলে ছবিটা বুনতে বুনতে যান। কখনও তার হাতে আমি স্ক্রীপ্ট দেখিনি পুরো বিষয়টি উনি মাথার ভেতরে নিয়ে ঘোরেন। আমাকেও সেভাবেই তিনি তৈরি করে নিলেন।
পঙ্কজ ত্রিপাঠিকে এখন বলা হয় বলিউডের ফাইনেস্ট এক্টর। কো আর্টিস্ট হিসেবে কেমন পেলেন আপনি—
উনার সম্পর্কে কী বলবো। ভীষণ সেনসিটিভ এবং দায়িত্বশীল। কাজের ব্যাপারে খুবই হেল্পফুল একজন। শুধু পঙ্কজদার কথা বললে ভুল বলা হবে। টোটাল প্রডাকশন ইউনিটটাই ছিল দারুণ হেল্পফুল।
তবুও এতটা সময় একসাথে কাজ করা। পঙ্কজ ত্রিপাঠির শুটিংয়ের বাইরের সময়টুকু কেমন আড্ডামুখর গেল। আমরা সোস্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছু ছবিও দেখলাম আপনাদের —
পঙ্কজজি দারুণ আন্তরিক আর সরল মানুষ। আমরা যেখানে শুটিং করছিলাম, স্বাভাবিকভাবেই সবাইকে একটি করে রুম দেয়া হলো। তো দেখা গেল, কোনো একদিন পঙ্কজ দা নিজেই মোমো বানিয়ে নিয়ে আসছেন। আমাদের খাওয়ালেন। উনি খুব দারুণ মমো বানান। একদিন বিহারি মাটন রান্না করে এনে শুটিংয়ের ফাঁকেই আমাকে বলছেন, ‘জয়াজি- শটদা দিয়েই চলে আসুন। আমরা সবাই রুমে, একসাথে খাবো। একদিন লিট্টিচোখা নিয়ে এলেন। বিহারি এক বিখ্যাত ফুড। খুবই সুস্বাদু ও হেলদি। দারুণ সময় কেটেছে।
‘কড়ক সিং’ কবে রিলিজ হবে। অনিরুদ্ধের একটি হিন্দি ছবি ‘লস্ট’ সম্ভবত মুক্তির প্রতিক্ষায়। আর আপনাকে এর ভেতরে নিশ্চয়ই অন্যান্য বলিউড প্রডাকশনে নক করেছে বা আলাপ হয়েছে?
হ্যাঁ। টনি দার ‘লস্ট’ এখন মুক্তির অপিক্ষায় রয়েছে। ছবিটিতে ইয়ামি গৌতম অভিনয় করেছেন। আর আমাদেরটা কবে রিলিজ দেওয়া হবে এটা আসলে প্রডিউসার কল। হিন্দি ছবি নিয়ে আবার কবে আসছি বা আসবো কি না, এসব আমার ক্যারিয়ার ভাবনা না। আমার চেষ্টা ভাল গল্প খোঁজা। খেয়ে না খেয়ে আমাকে হিন্দি ছবিতে কাজ করতেই হবে। এরকম ভাবনাও আমার নেই। আমি মনে করি বাংলার ব্র্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। এটাই আমার মূল দায়িত্ব। আর নিজের দেশের কাজ করেই এখন আন্তর্জাতিক হওয়া যায়। সুতরাং যেখানে যাই করিনা না কেন। একজন বাংলাদেশি শিল্পী হিসেবেই কাজগুলো করি আমি।
তবু যদি এভাবে বলি- হিন্দি ছবিতে কাজ করাটা নিশ্চয়ই ভাল গল্প বা টীম এর কারনেই। নাকি প্যান ইন্ডিয়া বা সর্বভারতে আরেকটু বিস্তৃতি পাওয়াটাও মনে মনে কাজ করেছে আপনার ? একজন শিল্পী তো এটা চাইতেই পারে .. আপনার মনের ভেতরকার ভাবনাটা কী রকম?
দেখুন প্যান ইন্ডিয়া বা সর্বভারতে আমাকে দেখবে। একজন শিল্পী হিসেবে আমার কাজ অনেকে দেখুক। এসব ব্যাপারের চাইতেও আমি খুব ভাল কাজের লোভী। আমার লোভটা ঐ জায়গায়। আমি আসলে দর্শকের রুচি তৈরি করতে চাই। আজ থেকে অনেকগুলো বছর আগে আমি যে ধরণের ছবিতে কাজ শুরু করেছিলাম। আজ ওই ধরণের ছবিগুলোই বাংলাতে ট্রেন্ড। আমি অফট্র্যাক বলবো না। কিন্তু একজন শিল্পী হিসেবে আমি নতুন নতুন পথে হাঁটতে চাই। যে পথটা সুন্দর, নান্দনিক। হয়ত পথ ঘাস, লতাপাতায় ঢাকা। আমি ঐসব সরিয়ে নতুন পথ তৈরি করতে চাই।
বাংলাদেশ সম্পর্কে পঙ্কজের ধারণা বা আপনাদের গল্পে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ কতটুকু কেমন ছিল—
অনেক অনেক আলাপ হয়েছে বাংলাদেশ নিয়েই। শুরুর যেদিন ভিডিও কলে টনি দা আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তারপর থেকে সেটে। আমি যেহেতু রিহার্সেল করার সুযোগ কম পেয়েছি। তাই আগেই চলে যেতাম সেটে। আসলে আর্টিস্টদের দেখবেন, সে যে দেশেরই হোক না কেন। একসাথে, একসুরে হয়ে গেলে, তারা সব একরকম। পঙ্কজ দা বাংলাদেশ সম্পর্কে , আাামদের পিএম সম্পর্কে, রাজনীতি বা এখানকার খাবারদাবার সব খবর রাখেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি গোপালগঞ্জ, উনার বাড়িও সেখানে। ইলিশ, জামদানি এসব সম্পর্কে আলাপ জুড়িয়ে দিলেন। সেটে একদিন তার স্ত্রী এলেন। আমরা ভাবীর সাথে আলাপ করলাম। একসাথে খেলাম। আসলে পৃথিবীর যে কোনো সত্ আর্টিস্টকেই দেখবেন, নির্মোহ, এবং পারস্পরিক সম্মানজ্ঞ্যানটা প্রচুর থাকে। এটা হয়ত শিল্পী বলেই সম্ভব।
এখন তো সকলেই ওটিটি প্লাটফর্মে কাজ করছেন। তা ফিল্ম হোক বা সিরিজ। আপনার টা দেখব কবে?
ওটিটির অফার আসছে বেশ। তবে আমি চাই, ওটিটি করলে বাংলাদেশের ডিরেক্টরের কোনো কাজ দিয়ে শুরু করতে। অর্থাত্ ওটিটিতে আমার প্রথম কাজ হবে বাংলাদেশি নির্মাতার।
শেষ প্রশ্ন। আপনার প্রডাকশন কোম্পানি ‘সি তে সিনেমা’ তো সরকারি অনুদান পেলো বেশ ক’বছর। ছবিটা কবে শুরু হচ্ছে।
আমরা প্রায় প্রস্তুত। সরকারি সহযোগিতা ছাড়াও ‘ফেসকার্ড’ আছে আমাদের সাথে। আমরা নির্মাতাকে অলরেডি নিজেদের ভাবনা পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিয়েছি। নির্মাতা সবকিছু গোছাচ্ছেন। তাই এটা এখন শুধুই নির্মাতার সিদ্ধান্তের অপেক্ষা।