আগামী সোমবার (২০ জানুয়ারি) ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। রীতি মেনে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান খোলা জায়গায় হয়। কিন্তু এবার চার দেয়ালের ভেতর, ছাদের নিচে শপথ নিতে হচ্ছে ট্রাম্পকে। তীব্র শীতের কারণেই এমন আয়োজন হচ্ছে। ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনের রোটুন্ডা হলে শপথ অনুষ্ঠান হবে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয়বার ঘরের ভেতরে শপথ নিচ্ছেন। খবর সিএনএনর।
৪০ বছর আগে আরেকজন রিপাবলিকানকে এই ভবনে শপথ নিতে হয়েছিল। ঘটনাচক্রে দুজনের জন্যই সেটা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ। রোটুন্ডায় প্রথমবার প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয় ১৯৮৫ সালের ২১ জানুয়ারি। সেই দিন রোনাল্ড রিগ্যান তার দ্বিতীয় মেয়াদের শপথ নেন।
বিষয়টি নিয়ে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘দেশজুড়ে আর্কটিক শৈত্যপ্রবাহ চলছে। আমি চাই না, এ কারণে কেউ আহত হোক বা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হোক। তাই, আমি শপথ অনুষ্ঠান ক্যাপিটল রোটুন্ডায় করার নির্দেশ দিয়েছি।’
দ্বিতীয় মেয়াদে রোনাল্ড রিগ্যানের প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানের দিন বিকেলে তাপমাত্রা মাইনাস ২৩ থেকে মাইনাস ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে গিয়েছিল। আর ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানের দিন সোমবারের আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, এদিন ওয়াশিংটনের তাপমাত্রা মাইনাস ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকতে পারে। তাপমাত্রা এর চেয়েও কমতে পারে।
ট্রাম্প জানান, তাঁর সমর্থকেরা রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ক্যাপিটাল ওয়ান অ্যারেনায় অনুষ্ঠানটির সরাসরি সম্প্রচার দেখতে পারবেন। বাস্কেটবল ও হকি খেলার এই স্টেডিয়ামে প্রায় ২০ হাজার দর্শক বসতে পারে।
তার প্রেসিডেন্সিয়াল প্যারেড পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউ হয়ে হোয়াইট হাউস পর্যন্ত যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটি পরিবর্তন করে ক্যাপিটাল ওয়ান অ্যারেনায় স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে কীভাবে এই স্টেডিয়ামে প্যারেড আয়োজন হবে, তা স্পষ্ট নয়।
অভিষেকের আগে ক্যাপিটাল ওয়ান অ্যারেনায় সমর্থকদের সঙ্গে একটি শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন ট্রাম্প। শপথের পর আবার ক্যাপিটল ওয়ান অ্যারেনায় উপস্থিত জনতার সঙ্গে যোগ দেবেন তিনি।
আয়োজনের পরিবর্তনের ফলে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শপথ গ্রহণে জনসমাগমের সঙ্গে এবারের তুলনা করা সম্ভব হবে না। অনুষ্ঠানটি প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার সাধারণ মানুষের সরাসরি দেখার কথা ছিল। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা সম্ভব হলো না।
এর আগেও তীব্র ঠান্ডার মধ্যে অনেক প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বাইরে হয়েছে। ২০০৯ সালে বারাক ওবামার প্রথম অভিষেকেও শীতল আবহাওয়া ছিল। তখন তাপমাত্রা মাইনাস ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল।
আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত মেয়াদের প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন শপথ নেওয়ার ৩৫ দিনের মাথায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ১৮৪১ সালের ৪ মার্চ তাঁর শপথ গ্রহণের দিনটি ছিল তীব্র ঠান্ডার। কিন্তু কোনো টুপি বা ওভারকোট ছাড়াই অভিষেকে ভাষণ দেন নবম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তীব্র শীতের মধ্যে বাইরে শপথ নেওয়াকে তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে মনে করা হয়।
১৮৭৩ সালের ৪ মার্চ প্রেসিডেন্ট উলিসেস এস. গ্রান্টের দ্বিতীয় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রচন্ড ঠান্ডায় উপস্থিত অনেক ছাত্র-সেনা ও নাবিকেরা মূর্ছা যান। সেদিন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ট্রাম্পের অভিষেকের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মুখপাত্র অ্যলেক্সি ওয়ারলি বলেন, ‘ট্রাম্পের অভিষেক কমিটি এবং শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা কংগ্রেস কমিটির সঙ্গে ইউএস সিক্রেট সার্ভিস ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। চরম আবহাওয়ার কারণে আমাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন করতে হচ্ছে।’