রক্তাক্ত ও বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিনের ১৮তম বার্ষিকী।
দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে। উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার চেতনায় জয় বাংলা ফিরে এসেছে। এগুলো যারা সহ্য করতে পারবে না, তারা বসে থাকবে না। তারা আঘাত করবে। বাংলাদেশকে আবারও জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করবে। সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাব।’
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক স্মরণসভায় এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘যখন আমার আব্বা দেশটাকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই তো ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।’
বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় বিভিন্ন গোষ্ঠী সরকারকে চাপ দিচ্ছে—এমন ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন তাদের সঙ্গে বসতে হবে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের খাতির করতে হবে। তাদের ইলেকশনে আনতে হবে। এত আহ্লাদ কেন, আমি তো বুঝি না।
বিএনপি কীভাবে ইলেকশনে আসবে সেই প্রশ্ন রাখেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। (বিএনপি) ইলেকশন করবে কীভাবে? যে দলের নেতাই নেই, সাজাপ্রাপ্ত অথবা পলাতক, তারা ইলেকশন করবে কী, আর কীভাবে ভোট পাবে? ভোট কাকে দেখে দেবে—এটিই তো প্রশ্ন। তার পরও অনেক চক্রান্ত আছে। এখনো যেমন নানা রকমের চক্রান্ত। ইলেকশন সামনে এলেই শুরু হয়। কিন্তু এ দেশের মানুষের ওপর আমার আস্থা আছে। বিশ্বাস আছে।’
২১ আগস্টের সেই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার দুঃসহ স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে কয়েকবার আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী।
বলেন,‘যারা স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন, প্রত্যেকেই কিন্তু কষ্ট ভোগ করছেন। যত বয়স বাড়ছে, ততই তাদের শরীরের যন্ত্রণা বাড়ছে। আমি সবার খোঁজ রাখি। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে তাদের সাহায্য করি। আমার যতদূর সাধ্য, করে দিয়েছে। আমি কাউকে ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছি। কাউকে জমি কিনে দিয়েছি। ঘর করে দিয়েছি। মাসোহারার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রতি মাসে ওষুধ কেনার টাকা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তারা যা হারিয়েছে, সেটি তো ফেরত দিতে পারব না। তাদের শরীরের যন্ত্রণা তো প্রশমন করতে পারব না।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বক্তৃতাগুলো অনুসরণ করবেন। কোটালীপাড়া বোমা পুঁতে রাখার আগে বলেছিল— আওয়ামী লীগ শতবছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে—শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনো দিন হতে পারবে না। এগুলোর তো রেকর্ড আছে।
এই বক্তৃতা আগাম দিল কীভাবে, যে বিরোধী দলের নেতা হতে পারব না। তার মানে আমাকে হত্যা করবে—এ পরিকল্পনা তারা নিয়ে ফেলেছে।’
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এজাতীয় হত্যাকাণ্ড হতে পারে না বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরে সংসদে আওয়ামী লীগকে তৎকালীন বিএনপি সরকার কথা বলতে দেয়নি মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া সেখানে বলে দিল— উনাকে আবার কে মারতে যাবে? উনি তো নিজেই গ্রেনেড নিয়ে গেছেন! নিজেই গ্রেনেড হামলা করেছেন! মানে আমি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। এটিই হচ্ছে তাদের কথা।’