তাতেন্দা তাইবু জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার, টেস্ট এবং ওয়ানডে অধিনায়ক। মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট অধিনায়ক হয়েছিলেন।
ছোটোখাটো গড়ন, মায়াবী চেহারা, ভালো পারফরম্যান্সের সুবাদে শুরুতেই বাংলাদেশ তথা গোটা ক্রিকেট দুনিয়ায় তিনি পরিচিত হয়ে উঠেন। বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের কাছে কয়েকটি ম্যাচ হারবার জন্যও দায়ী তাতেন্দার অসাধারণ পারফরম্যান্স।
কিন্তু ২০১২ সালে তাতেন্দা ক্রিকেট খেলা ছেড়ে দিয়ে গির্জার প্রতি মনোনিবেশ করার সিদ্ধান্ত নেন। তাতেন্দা সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, “আমি কেবল অনুভব করি যে এখন আমার আসল ডাকটি প্রভুর কাজ থেকে এসেছে। যদিও আমি ভাগ্যবান এবং গর্বিত যে আমার দেশের হয়ে খেলেছি, কিন্তু এখন সময় এসেছে আমার পুরো মনোনিবেশ অন্য জীবনে দেবার।
২০১৬ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের লিভারপুল এবং জেলা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় বিভাগে খেলোয়াড়-কোচ-উন্নয়ন-কর্মকর্তা হিসেবে হাইটাউন সেইন্ট মেরি কলেজে যোগদান করেছিলেন।
২০১৬ সালের জুনে তিনি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের নির্বাচক এবং উন্নয়ন কর্মকর্তার আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তাতেন্দা তাইবু তার অবিশ্বাস্য যাত্রা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন মাল্টিনিউজটোয়েন্টিফোর বার্তা সম্পাদক তারিক চয়ন এর সাথেঃ
* কেমন আছেন?
– আমি ভাল আছি, ধন্যবাদ।
* শুনেছি আপনি আপনার পরিবারের সাথে যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হয়েছেন, কেন জানতে পারি?
– হ্যা ২০১৬ সালে। আসলে আমরা একটা পরিবর্তন চেয়েছিলাম এবং আমরা চেয়েছিলাম আমাদের বাচ্চারা যেন ঠিকমতো স্কুলে যায়, লেখাপড়া শেখে। সুতরাং বলা যায় আমার বাচ্চাদের লেখাপড়ার জন্যই আমাদের যুক্তরাজ্যে যাবার এই সিদ্ধান্ত।
* আপনি নিশ্চয়ই সেখানে বসে নেই। কি করছেন?
– আমার বাচ্চাগুলো যে স্কুলে যায়, সেখানে আমি ক্রিকেট কোচিংয়ে জড়িত। সেইন্ট মেরি কলেজ।
আমি ভারতে আশুল ক্রিকেট একাডেমির অংশীদার। আমরা জিম্বাবুয়ে এবং বাংলাদেশেও এর শাখা চালু করতে যাচ্ছি। তাছাড়া পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্ব তৈরি করতে আমি আমার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
*মাত্র ২১ বছর বয়সে আপনি ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে কনিষ্ঠ টেস্ট অধিনায়ক হয়েছিলেন! তবে মাত্র ২৯-এ আপনি ক্রিকেট ছেড়ে দিয়ে গির্জায় কাজ করার দিকে মনোনিবেশ করেন। কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
– হ্যাঁ, আমি মনে করি ২১ বছর বয়সে ওটা ছিল দারুণ এক সুযোগ। বিশাল এক ব্যাপার। কিন্তু আমি অনুভব করি, জীবনকে উপলব্ধি করা তার চেয়েও বিশাল কিছু। ২৯-এ, আমাকে চলে যেতে হয়েছিল কারণ আমি নিজেকে গুরুতর প্রশ্ন করা শুরু করেছিলাম। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল সবকিছুর শেষটা কি?
আপনি ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন, তবে একসময় আপনাকে অবসর নিতে হবে, তারপরে আপনি বৃদ্ধ হয়ে যাবেন, কিন্তু তারপর কি? আমাকে জীবনের সত্যিকার ইস্যুটি মোকাবিলা করতে হয়েছিল যা হলো একজন ব্যক্তির অন্তর্নিহিত শান্তি। যাই হোক সেসবের মুখোমুখি হতে শুরু করি যা গির্জায় গিয়ে শেষ হয়েছে এবং তখন থেকে আমি মানুষের পক্ষ হয়ে খেলেছি।
জীবনের মূল সমস্যাগুলো টাকা দিয়ে মোকাবেলা করা যায় না। যদি কোনও রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তবে এমন একটা সময় আসে যখন ডাক্তার বলে, কেমোথেরাপি কাজে আসবে না।
তখন রোগীর কোন সম্পদই তাকে সাহায্য করবে না। তাই আমি সবসময় আমার বাচ্চাদের এবং অন্যান্য লোকদের বলি যে জীবনের মূল সমস্যাগুলো অর্থের সাহায্যে মোকবেলা করা যায় না। চিকিত্সকরাও যখন হাল ছেড়ে দেয়, এমনকি অর্থও যখন কোন সাহায্য করতে পারে না, তখনতো আমরা প্রার্থনায় বসি।
তাই আমাকে অন্তর্নিহিত শান্তি খুঁজতে হয়েছিল এবং আমি তা পেয়ে আনন্দিত। অনেকেই আমার জীবনের সেই অংশটি বুঝতে পারে না।
* মনে পড়ে একবার আপনি একটি প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন এভাবে, ‘সময় এসেছে আমার সম্পূর্ণ মনোযোগ আমার জীবনের সেই অংশটিকে দেবার।’ ‘সেই অংশটি’ কী? সামাজিক কাজ, ধর্ম নাকি অন্য কিছু?
– ঠিক বলেছেন। আমি অন্তর্নিহিত শান্তির কথাই বুঝাতে চেয়েছিলাম। কারণ যখন কোনও ব্যক্তি অন্তর্নিহিত শান্তি লাভ করে, কেবল তখন থেকেই সে সামাজিক কাজ করা বা কাউকে সহায়তা করার কথা ভাবতে পারে। যখন আপনার অন্তর্নিহিত শান্তি থাকবে না তখন আপনি নিজের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করবেন। অনেক লোকের যদিও এটা থাকে না, কিন্তু তারা তা মানুষকে দেখানোর চেষ্টা করে।
* বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য আপনার কোনও পরামর্শ?
– তরুণ বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের আমার পরামর্শ, আপনি জীবনে যেটাই বেছে নেবেন, আপনি তাতে ভালো পারফরম্যান্স করতে পারবেন। আপনি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেন, প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারেন, তবে এগুলো আসল চ্যালেঞ্জ নয়। আসল চ্যালেঞ্জটি হল প্রচুর অর্থোপার্জন করার পর, জনপ্রিয় হয়ে উঠার পর বিনয়ী হতে পারা। অনেক লোক আপনার সাথে কথা বলতে চাইবে, আপনার সাথে দেখা করতে চাইবে। তখনই বোঝা যাবে আপনি ভালো মানুষের সংজ্ঞায় পড়েন কিনা।
* মাল্টিনিউজটোয়েন্টিফোর কে সময় দেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
– আপনাকেও ধন্যবাদ। মাল্টিনিউজটোয়েন্টিফো্র পাঠকদের এবং আমার বাংলাদেশী ফ্যানদের জানাচ্ছি শুভেচ্ছা।