তরমুজ খুব সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি ফল। গরমে প্রশান্তি দিতে তরমুজের তুলনা হয় না। তরমুজের প্রায় ৯২ শতাংশই পানি, তাই, শরীরে পানির অভাব পূরণে তরমুজ একটি চমৎকার ফল। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন এ, সি, বি৬, পটাশিয়াম ও আঁশ।
আমরা সাধারণত তরমুজের মধ্যকার লাল অংশটুকুই খেয়ে থাকি, যা সম্ভবত তরমুজের মোট ওজনের প্রায় অর্ধেক এবং বাকি অর্ধেক খোসা। অর্থাৎ, একটি দশ কেজি ওজনের তরমুজের পাঁচ কেজিই খোসা বা ফেলনা! এই প্রায় অর্ধেক ওজনের বাইরের খোসাটি আমরা সাধারণত কি করি? হয় ফেলে দেই কিংবা গরু-ছাগলকে খাইয়ে থাকি। গ্রামে গরু-ছাগলকে খাওয়ানোর সুযোগ থাকলেও, শহরে সেই সুযোগ নেই বললেই চলে। শহরের মানুষ তাই তরমুজ খাওয়ার পর পুরো খোসাই ফেলে দেন ময়লার বিনে, যা পচে গিয়ে মারাত্মক দুর্গন্ধ তৈরি করে। এটা পরিবেশকে যেমন দুষিত করে তেমনি শহরের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজ এবং দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেয়।
অনেকেই হয়তো জানেন না তরমুজের ভিতরের সুস্বাদু অংশের মতো বাইরের খোসাটাও খাওয়ার উপযোগী এবং সেখানেও রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। তরমুজের খোসাকে ইংরেজিতে বলে “watermelon rind”। এতে রয়েছে প্রচুর পানি, অল্প পরিনাম ভিটামিন সি, এবং বি৬। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে ভরপুর এই তরমুজের খোসা। এটির নাম সিট্রালিন। সিট্রালিন এক ধরণের অ্যামাইনো অ্যাসিড আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয়। কিন্তু, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, আমাদের হার্ট এবং রক্তনালীকে সুস্থ্য রাখতে এটি সাপ্লিমেন্ট আকারেও খাওয়া হয়। আমাদের কিডনি সিট্রালিনকে রাসায়নিকভাবে রুপান্তর করে আরজিনিন নামক আরেকটি অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে। নাইট্রিক অক্সাইড আমাদের রক্তনালীসমুহকে প্রসারিত করে এবং রক্তের সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। তাই এটি উচ্চ-রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে সিট্রালিন পুরুষদের যৌন সমস্যা ইরেকটাইল ডিসফাঙ্কশনেও বেশ কার্যকরী।
কিভাবে খাবেন?
আপনি আর্টিকেলটি পড়ার সাথে সাথেই হয়তো ভাবতে শুরু করেছেন, তরমুজের খোসা খাবো, কিন্তু কিভাবে? নিশ্চয় রান্না করে কিভাবে খাবেন সেটি ভাবছেন। হ্যাঁ, এটি রান্না করে, কাঁচা অবস্থায় সালাদ বা জুস হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। তরমুজের খোসা দিয়ে আচার, হালুয়া ইতাদিও তৈরি করা যায়।
তরমুজের খোসা রান্না করলে এটি লাউয়ের মতো ছোট ছোট টুকরো করে ডাল, টম্যাটো, শুটকি মাছ ইত্যাদি মিশিয়ে তরকারী করে খেতে পারেন। এটি খেতে অনেকটা চাল কুমড়ার মতো লাগবে। তবে রান্নার চেয়ে কাঁচা খেতে পারলে বেশী উপকারী। সালাদ হিসেবে খেতে হলে উপরের সবুজ অংশ্তুকু পিলার দিয়ে ছিলে ফেলতে হবে এবং ছোট ছোট টুকরো করে লবন, গোলমরিচের গুঁড়ো, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ এবং অলিভ বা সরিষার তেল মাখিয়ে নিতে হবে। সঙ্গে গাজরও যুক্ত করলে পুষ্টিগুণ বেড়ে যাবে অনেকগুণ। আর জুস করতে হলে উপরের সবুজ অংশ না ছাড়ালেও চলবে। ভালো করে ধুয়ে, ছোট ছোট পিস করে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করলেই হবে। গুগল বা ইউটিউবে “watermelon rind recipes” লিখে সার্চ করলে তরমুজের খোসার মজার সব রেসিপি পেয়ে যাবেন।
করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে এই তরমুজের খোসার তরকারী আমাদের সবজির চাহিদা কিছুটা হলেও কমাবে। পাশাপাশি সালাদ বা জুস করে খাওয়ার পদ্ধতি জানলে এটা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে, হার্টকে সুস্থ্য রাখবে। আর রমজানে তরমুজের ভিতরের রসালো অংশের পাশাপাশি খোসার সালাদ বা জুস@ শরীরকে দেবে প্রয়োজনীয় পানি এবং ভিটামিন। তরমুজের খোসা খাওয়ার উপযোগিতা এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানলে দেশের অনেক মানুষ যারা টাকার অভাবে সবজি কিনতে পারেন না তাঁরা তরমুজের খোসার তরকারী খেতে উৎসাহিত হবেন। এতে আমাদের খাদ্যের চাহিদা কিছুটা পূরণ হবে এবং পরিবেশকেও দূষণমুক্ত রাখতে সাহায্য করবে। তাই, তরমুজের খোসা ফেলে না দিয়ে নিজে খাই বা বাড়ীর আশেপাশের গরীব মানুষদের দিয়ে দেই।
(আন্তরিক ধন্যবাদ আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রফেসর ডঃ আনোয়ারুল ইসলাম স্যারকে তরমুজের খোসার তরকারীর মেন্যু সম্পর্কে ধারণা দেবার জন্য এবং আমাকে এ সম্পর্কে লিখতে উৎসাহিত করার জন্য)
লেখক পরিচিতি
ডঃ মোঃ আজিজুর রহমান
সহযোগী অধ্যাপক,ফার্মেসি বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।