দুদিনের সফরে ভারতে আসছেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। এসেই সোজা যাবেন গুজরাটে। তাই সাজসাজ রব পড়ে গিয়েছে সেখানে। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। যার জেরে ইতিমধ্যে কিছু বিতর্কও তৈরি হয়েছে। ট্রাম্পের সফরের জন্য ভারত সরকারের ১০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানাজানি হতেই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। এর পাশাপাশি ট্রাম্পের যাত্রাপথে থাকা বিভিন্ন বসতি এলাকা যেভাবে পাঁচিল দিয়ে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে তা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এর মাঝেই আহমেদাবাদের মোতেরা স্টেডিয়াম কাছে একটি বস্তিতে থাকা ৪৫টি পরিবারকে দ্রুত জায়গা খালি করার নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় পৌরনিগম। যা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারত সফরে আসছেন ট্রাম্প। এখানে আসার পর গুজরাটের আহমেদাবাদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একটি রোড শো করার কথা রয়েছে তাঁর। এর জন্য সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইন্দিরা ব্রিজ পর্যন্ত এলাকার বিভিন্ন জায়গায় অনেক দেওয়াল তৈরি করা হয়েছে। ওই এলাকাগুলিতে থাকা বসতিগুলি যাতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চোখে না পড়ে তার জন্যই এই পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে। বিষয়টিকে মুখোশ পরানোর চেষ্টা বলে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। মোতেরা স্টেডিয়ামে আয়োজিত হতে চলা ওই জনসভায় একলক্ষ ২৫ হাজার মানুষের জমায়েত হবে। আর এই অনুষ্ঠানের জন্য স্টেডিয়ামের কিছুটা দূরে একটি বসতিতে থাকা ৪৫টি পরিবারকে অবিলম্বে এলাকা ছাড়ার নোটিস ধরিয়েছে আহমেদাবাদ পৌরনিগম। যার ফলে ওই পরিবারগুলির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। শুধু তাই নয়, নোটিসটি গত ১১ ফেব্রুয়ারি ইস্যু করা হয়েছে এবং তাতে সাতদিনের মধ্যে জমি খালি করতে হবে বলে জানানো হয়েছে। যদিও সোমবারই নোটিসটি পরিবারগুলির হাতে ধরিয়ে মঙ্গলবার অর্থাৎ একদিনের মধ্যে জায়গা খালি করতে বলা হয়েছে।
ওই বসতিতে বসবাসকারী তেজা মেদা নামে ৩৫ বছরের এক যুবক বলেন, ‘আমরা এই এলাকায় প্রায় ২২ বছর ধরে বাসবাস করছি। কিন্তু, এখন আহমেদাবাদ পৌরনিগমের কয়েকজন আধিকারিক এসে বসতি খালি করার নোটিস ধরিয়েছে। আমেরিকার প্রধান মোতেরা স্টেডিয়াম দেখতে আসবেন তাই দ্রুত আমাদের জায়গা খালি করতে নোটিস ধরানো হয়েছে। এর জন্য সোমবার আমাদের কাজে যেতেও নিষেধ করা হয়। এখানে যাঁরা থাকি তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। মজুর অধিকার মঞ্চ নাম একটি সংস্থায় নথিভুক্ত করা আছে। তাদের মারফত কাজে গিয়ে রোজ ৩০০টাকা রোজগার করি। তাতে আমার পরিবারের চারজন সদস্যের কোনও রকমে দিন গুজরান হয়। এখন যদি বসতি ছেড়ে চলে যেতে হয় তাহলে কী করব? কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।’
মোতেরা স্টেডিয়াম থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ওই বসতিতে মোট ৬৫টি পরিবার আছে। তাদের মধ্যে ৪৫টি পরিবারকে জমি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ওই পরিবারগুলির ২০০ জন মানুষকে গৃহহীন হতে হবে। যা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক তৈরি হয়ে স্থানীয় মহলে। যদিও ওই পরিবারগুলি সরকারি জমি জোর করে দখল করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে আহমেদাবাদ পৌরনিগমের তরফে। তাই তাদের জমি খালি করার নোটিস ধরানো হয়েছে। যার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের কোনও যোগ নেই।
সংবাদ প্রতিদিন অবলম্বনে…