ট্রাম্পের ওপর হামলায় মার্কিন সমাজে উত্তেজনা বাড়তে পারে

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘গেম চেঞ্জার’ হতে পারে। মুখে রক্ত নিয়ে মঞ্চে তিনি মুষ্টিবদ্ধ হাত ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন—এমন একটি ছবি ভবিষ্যতে কিছু সময়ের জন্য মার্কিন রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ চিত্র হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। ছবিটি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিপরীতে অবস্থান নেবে, যিনি তাঁর বয়স ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জোরালো আহ্বানের মুখোমুখি হচ্ছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পের ওপর হামলার পরপরই এই হত্যাচেষ্টার ‘কঠোর নিন্দা’ জানিয়েছেন।

তিনি এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমার বন্ধু সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনায় আমি গভীর উদ্বিগ্ন। রাজনীতি ও গণতন্ত্রে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। আমাদের চিন্তা ও প্রার্থনা নিহতদের পরিবার, আহত ও মার্কিন জনগণের সঙ্গে রয়েছে’

যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক—উভয় দলই এই হামলার নিন্দা করেছে।

ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন। বাইডেন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই…এটি অসুস্থতা। এ কারণে আমাদের দেশকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এমন হতে পারে না।
আমরা এমন হতে পারি না। এটিকে সমর্থন করা যাবে না।’

সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামাও ট্রাম্পের ওপর হামলার নিন্দা করেছেন। তবে এসব নিন্দা মার্কিন রাজনীতিতে বিভেদ দূর করবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

প্রকৃতপক্ষে দেশটিতে মেরুকরণ এত শক্তিশালী যে এ ঘটনা মার্কিন সমাজে উত্তেজনাকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।

কী কারণে হামলা হয়েছে, তা-ও এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ট্রাম্প নিজেকে সেই ডেমোক্র্যাটদের শিকার হিসেবে চিত্রিত করার পটভূমিতে হামলাটি হয়েছে, যাদের লক্ষ্য ছিল যেকোনো মূল্যে নভেম্বরের ভোটে বিজয়ী হওয়া থেকে ট্রাম্পকে আটকানো নিশ্চিত করা।

ট্রাম্প নিজে কখনোই ডেমোক্র্যাটদের অভিযুক্ত করার সুযোগ হারাননি, যেমন তাঁকে ভুয়া মামলা ও অভিযোগে জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে, যার লক্ষ্য তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করা। সুতরাং ট্রাম্প নিশ্চিতভাবে সহানুভূতির মাধ্যমে ভোট সংগ্রহ করতে চান।

এ ছাড়া ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টা জাতি ও গণমাধ্যমকে বাইডেনের কাছ থেকে দূরে নিয়ে গেছে। সবার নজর এখন স্পষ্টভাবে ট্রাম্পের ওপর। এর অর্থ হতে পারে, বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে আসন গ্রহণের সম্ভাবনা বাড়ছে। সব হিসাবেই রিপাবলিকান দল ভালো অবস্থানে রয়েছে, দলটি একে অপরিমেয় রাজনৈতিক পরিণতি হিসেবে দেখছে। উইসকনসিনে এই সপ্তাহে শুরু হওয়া রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশন ট্রাম্পকে তাদের প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করবে।

এদিকে ভারতে নীতিনির্ধারকরা নিঃসন্দেহে এই পরিস্থিতিকে সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করবেন। বহু বছর ধরে দুই দেশের সম্পর্ক গভীর হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নয়াদিল্লি ভারসাম্য বজায় রেখেছে, উভয় পক্ষের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো রাজনৈতিক অস্থিরতার অর্থ কেবল ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দুটি সংঘাতের প্রভাবে বিপর্যস্ত বিশ্বের জন্য খারাপ খবর হতে পারে। ভারতের জন্যও এটি প্রযোজ্য।

লেখক : ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব, বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার ও যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত

Comments (0)
Add Comment