দীর্ঘদিন ধরে যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের জন্য সুখবর। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য ওষুধ এসে গেছে। ওষুধটি ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদনও পেয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক শাখা সম্প্রতি টাইপ-১ ডায়াবেটিস মোকাবিলায় নতুন এ ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। তারা বলছে, যেসব রোগী টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে, তাদের এই ওষুধ দেওয়া হলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দেরি করে এ রোগে আক্রান্ত হবেন।
নতুন করে অনুমোদন পাওয়া ডায়াবেটিসের এই ওষুধটির নাম ‘টেপলিজুমাব’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে টেপলিজুমাব ‘নতুন যুগে’র সূচনা করেছে। ওষুধটি সংশ্লিষ্ট রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হলে তা তার শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার আচরণ ক্রমশ স্বাভাবিক করে তোলে।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস মূলত শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতার ওপর আঘাত করে এবং ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলো ধ্বংস করে দেয়। অপরদিকে, টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরেও যথেষ্ট পরিমাণ ইনসুলিনের উৎপাদন হয় না। বিশ্বজুড়ে টাইপ-১ ডায়াবেটিসের চেয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি। ওজন কমানো, শরীরচর্চাসহ লাইফস্টাইল সংক্রান্ত জরুরি কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা গেলেও টাইপ-১ জেনেটিক রোগে পরিণত হয়। এখনও পর্যন্ত এটি প্রতিরোধ করার মতো কোনো উপায় আবিষ্কৃত হয়নি। টাইপ-১ ডায়াবেটিস শনাক্ত হতে দেরি হলে শরীরের ওপর তার মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। এতে শরীরের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমনকি, মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮৭ লাখ মানুষ টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, যাকে আমরা ইমিউন সিস্টেম বলি। এ ব্যবস্থা সাধারণত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে।
২০১৯ সালে টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন এমন কিছু মানুষকে পরীক্ষামূলকভাবে টেপলিজুমাব ওষুধ দিয়ে দেখা গেছে, তারা যে সময়ে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন, তার চেয়ে অন্তত দুই বছরের কিছু বেশি সময় পরে তারা আক্রান্ত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিলম্বের বিষয়টিই খুব তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে, কম বয়সীদের জন্য। কারণ, ওই বাড়তি পাওয়া সময়টুকুতে তাদের ইনসুলিন নিতে হবে না কিংবা নিয়মিত রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করাতেও হবে না। গবেষকেরা বলছেন, এই ওষুধ গ্রহণকারী ব্যক্তিদের রক্তের শর্করার মাত্রা তুলনামূলকভাবে আরও বেশি বছর স্বাস্থ্যকর অবস্থায় থাকে। শুধু তা–ই নয়, তারা আরও বেশি দিন রক্তে উচ্চ শর্করাজনিত বিভিন্ন জটিলতায় যেমন কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া বা চোখের অসুখে আক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।