নাগরিক সমাবেশে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, টিকা দিতে না পারেন, ডেঙ্গুর চিকিৎসা করুন। মশারি দিন। প্যারাসিটামল দিন। ডেঙ্গুর চিকিৎসা করতে বেশি কিছু লাগবে না। আপনাকে অনুরোধ করছি ১ লক্ষ মশারী গরীবের মাঝে বিতরণ করেন। ১০ লক্ষ প্যারাসিটামল দিন। গোয়ার্তুমি করবেন না।
আজ শুক্রবার (১৩ আগস্ট) বিকেল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবিলম্বে সবার জন্য টিকা, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দাও,নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশনিং ও জনজীবন সচল রাখার ৩ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের দাবিতে নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আজকের দিনটা আমার জন্য বিশেষ স্মরণীয় দিন। ১৯৭২ সালে মুজিব ভাই হঠাৎ আমাকে ডেকে পাঠালেন সাভার থেকে তার অফিসে। আমি বুঝে উঠতে পারলাম না হঠাৎ তিনি কেন আমাকে ডাকলেন। বাকশালে যোগদানের জন্য বললেন। মুজিব ভাইয়ের সাথে তর্ক করা যায়, মতানৈক্য করা যায়। আমি বললাম আপনি তো সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। আপনি বাকশাল করেন না। আমি বলেছিলাম আপনাকে ভুল পথে পরিচালিত করা হচ্ছে। আপনি ঐ পথে পা দিয়েন না। আপনি গণতন্ত্রের পথেই থাকেন। এর পর আমি চলে যাই বিদেশে আমার অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে। এর পরের দিনই ১৫ই আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এর পর সাংবাদিকরা আমাকে সেই খবর দিয়েছিল। প্রশ্ন করেছিল,
your prime minister has been killed. What is your reaction? আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। আমি বলেছিলাম উনি রক্ত দিয়ে ঋণ শোধ করে গেলেন। আর আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে এসে বলেছিলেন, আমার বাবা-মাকে হত্যা করা হয়েছে। তোমরা কাঁদো নাই, আমি তোমাদেরকে কাঁদায়ে ছাড়বো। তাই উনি আজকে আমাদের সবাইকে কাঁদাচ্ছে। ভ্যাকসিনের কথা বলে ভ্যাকসিন দেন না।
তিনি বলেন, যেখানে সাড়ে সাত ডলার দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো ভ্যাকসিন পাওয়া যায়,ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সবচেয়ে বেশি কার্যকর প্রমাণিত, সেটা না কিনে বেশি দাম দিয়ে কিনছেন।
তিনি বলেন, রাশিয়া থেকে ২ কোটি টিকা দিতে চেয়েছিল। নিলেন না। প্রাইভেটে দেননি। খুব ভালো কাজ করেছেন। কিন্তু কত টাকা দিয়ে টিকা কেনা হচ্ছে জানার অধিকার সবার আছে। এটা গোপন থাকতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, অকারণে যদি আজকে বঙ্গবন্ধুকে সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর জন্য টানাটানি করা হয়, সেটা খুবই জঘন্য কাজ হবে। একইভাবে ভুল কাজ হচ্ছে জিয়াউর রহমানকে শেখ মুজিবের হত্যার সাথে জড়িত করে অকারণে মিথ্যাচার করা। এটাকে অ্যাটেনশান ডাইভারশন বলে। গোয়েন্দা বাহিনী অন্যদিকে দৃষ্টি সরিয়ে দেবার জন্য তারা পরীমনি আবিস্কার করেছে, তারা সম্রাট আবিস্কার করেছে, এখানেও তাই।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বলছি, ক্ষমতা চিরকাল থাকবে না। তখন সুষ্ঠুভাবে টিকা না দেওয়ার অপরাধে আপনারও বিচার হতে পারে। সেই দন্ড হবে খালেদা জিয়ার দণ্ডের চাইতে বেশি। সেদিন আপনার পাশে আমাদের মতো কয়েকজন ছাড়া কাউকে পাবেন না। যেমন বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর কাদের সিদ্দিকী ছাড়া কেউ আওয়াজ করে নি। কাজেই ক্ষমা করতে শিখুন। ভুলে গেলে চলবে না বঙ্গবন্ধু সবচেয়ে বড় অপরাধী ভুট্টোকেও ক্ষমা করেছিল।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে আত্মরক্ষার শিক্ষা দেন, যাতে তারা নিজ দেশে গিয়ে যুদ্ধ করতে পারে, তারা আরাকানকে মুক্ত করতে পারে, যেভাবে তালেবানরা করেছে। রোহিঙ্গাদের সাথে তালেবানদের যোগসূত্র খতিয়ে দেন, তাহলে তারা আরাকান মুক্ত করবে, আমাদের দেশ থেকে ১২ লক্ষ লোক যাবে। আজকে বিশ্বব্যাংক বলছে, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশকে নিয়ে নিতে। এতোবড়ো সাহস তারা কিভাবে দেখালো। এর তাড়না আপনি তাদের সৎবুদ্ধি দেন নাই।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মান্না, করোনা বিশ্বব্যাপী কয়েক লাখ লোক নিয়ে গেছে। বাংলাদেশে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছে। একমাস লকডাউন ছিল করোনা কমেনি। এখনও করোনায় মানুষ মারা যাচ্ছে।।তাহলে এখন লকডাউন খুলে দিল কেন। লকডাউন খুলে দেওয়াতে মানুষ কাজ করে খেতে পারবে, তবু স্বাস্থ্য বিধি মানতে হবে।
ভাসানী অনুসারীর মহাসচিব অনুষ্ঠানে নাগরিক সমাজের পক্ষথেকে “অবিলম্বে সবার জন্য টিকা, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দাও, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশনিং ও জনজীবন সচল রাখার ৩ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের দাবিতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।