ডিম্বাশয়ের বড় টিউমার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এক নারী। কিন্তু অপারেশনের আগে পরীক্ষায় ধরা পড়ে তিনি গর্ভবতী। আর শিশুটি জরায়ুর বাইরে পেটের ভেতরে বেড়ে উঠছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিরল এই ঘটনায় জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে এক শিশু। সফল অস্ত্রোপচারের পর মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ আছে। ব্যতিক্রমী এই ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়।
সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ বলছে, ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে এক নারী ডিম্বাশয়ের বড় টিউমার অপসারণের অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু অপারেশনের আগে পরীক্ষায় উঠে আসে অবাক করা তথ্য— তিনি গর্ভবতী। আরও বিস্ময়ের বিষয়, শিশুটি জরায়ুর ভেতরে নয়, বরং পেটের ভেতরে টিউমারের আড়ালে বেড়ে উঠছিল। লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডার্স-সিনাই মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক দল জানান, এটি অত্যন্ত বিরল এক ধরনের অ্যাবডোমিনাল এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি। পরে জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিউমার অপসারণের পাশাপাশি ওই নারী সুস্থ একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।
মা সুজ লোপেজের বয়স ৪১ বছর। বহু বছর ধরে অনিয়মিত মাসিক ও পেটের অস্বস্তিতে ভুগছিলেন তিনি। চিকিৎসকেরা তার ডিম্বাশয়ে প্রায় ২২ পাউন্ড ওজনের একটি বিনাইন সিস্ট শনাক্ত করেন এবং তা অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন। অপারেশনের আগে নিয়মিত গর্ভধারণ পরীক্ষা করা হলে ফল আসে পজিটিভ। আর এতেই সবাই চমকে যান।
এরপর আলট্রাসাউন্ড ও এমআরআই পরীক্ষায় দেখা যায়, ভ্রূণটি জরায়ুর বাইরে— পেটের ভেতরে বড় টিউমারের পেছনে আছে, এমনকি মায়ের যকৃতের কাছাকাছি জায়গায় বেড়ে উঠছে।
চিকিৎসকদের মতে, পেটের ভেতরে গর্ভধারণ অত্যন্ত বিরল ঘটনা। এই ধরনের এক্টোপিক প্রেগন্যান্সিতে নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর বদলে শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ বা রক্তনালিতে স্থাপিত হয়। আর এটি মারাত্মক রক্তক্ষরণ ও মায়ের জীবনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সাধারণত এসব গর্ভধারণ শুরুতেই শনাক্ত হয় এবং পূর্ণ মেয়াদে পৌঁছায় না। তবে খুব অল্প কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।
গালফ নিউজ বলছে, অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকেরা প্রথমে টিউমারটি অপসারণ করেন, এরপর শিশুটিকে জন্ম দেন। শিশুটির নাম রাখা হয়েছে রিউ। জন্মের সময় তার ওজন ছিল প্রায় ৮ পাউন্ড বা ৩.৬৩ কেজি। পুরো প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী যুক্ত ছিলেন।
এদিকে অপারেশনের সময় মায়ের বেশ রক্তক্ষরণ হলেও রক্তসঞ্চালন ও নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে তাকে স্থিতিশীল করা হয়। পরে মা ও সন্তান দুজনই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান।
বিশেষজ্ঞরা জানান, অ্যাবডোমিনাল এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি সাধারণত প্রাণঘাতী হতে পারে। সুজ লোপেজের মতো নারীর ক্ষেত্রে পূর্ণ মেয়াদে শিশুর বেঁচে থাকা খুবই বিরল, তবে উন্নত ইমেজিং, দক্ষ অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শিশুকে সুস্থভাবে জন্ম দেয়া সম্ভব হয়। সম্প্রতি পেরুতেও এমন একটি ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে ও বেশ সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসার কারণে মা ও সন্তান— উভয়ই বেঁচে যান।