টাঙ্গাইলে আঙুর চাষ করে সফল পুলিশ সদস্য জাহিদুল

বাজারে আঙুরের দাম একটু বেশি। এছাড়াও সব সময় বাজার থেকে আঙুর কিনে এনে খাওয়া সম্ভব হয় না। তাই নিজে বাগান করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চিন্তা থেকে আঙুর বাগান করার স্বপ্ন দেখেন পুলিশ সদস্য জাহিদুল ইসলাম। ইউটিউব দেখে ও আঙুর চাষিদের সহায়তায় তিনি এই ফলটি চাষে সফল হয়েছেন। তার সফলতা দেখে আরও অনেকেই আঙুর চাষের স্বপ্ন দেখছেন। প্রতিদিন তার বাগানে আশেপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকেই ভিড় করেন আঙ্গুর দেখতে।

জাহিদুল ইসলাম টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার দাড়িয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পুলিশ সদস্য হিসেব দায়িত্ব পালন করায় সার্বক্ষনিক বাগানটি তার স্ত্রী সেলিনা বেগম দেখে রাখেন।

জাহিদুল ইসলাম জানান, চাকরির অবসর সময়ে তিনি ইউটিউবে আঙুর চাষ দেখে উদ্ভুদ্ব হন। ইউটিউব দেখেই পরিকল্পনা করেন বাড়ির পতিত জায়গায় আঙুর চাষ করার।

চাকরির পাশাপাশি সফল কৃষি উদ্যাক্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। স্বপ্ন বাস্তবায়নে এক বছর আগে বাড়ির পাশে এক বিঘা জমিতে ৬০টি আঙুরের চারা রোপণ করেন জাহিদুল ও তার স্ত্রী সেলিনা বেগম। ৬০টি চারা ক্রয় করতে তাদের ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফল আসা পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৮৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এই পরিবারের।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, চারা রোপণের পর আমি ও আমার স্ত্রী শুরু করি পরিচর্যা। পরিবারের অন্যন্য সদস্যরাও আমার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেন। আস্তে আস্তে চারাগুলো বড় হয়। এক সময় আমার স্বপ্ন পূরণ হতে থাকে। বছর শেষে ফলন আসতে থাকে বাগানে। মাচা ভর্তি হয় থোকায় থোকায় আঙুরে।

তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে প্রতিদিন সকালে ৫০ থেকে ৬০ কেজি আঙুর তুলেছি বাগান থেকে। বিক্রি করছি ২০০ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে দুই এক দিন পর পর বাগান থেকে ১৫ থেকে ২০ কেজি আঙুর তুলে বিক্রি করছি। ইতোমধ্যেই প্রায় দেড় লাখ টাকার আঙুর বিক্রি করেছি। আশা করছি এ বছর তিন লাখ টাকার আঙুর বিক্রি করতে পারবো।

পাশ্ববর্তী মধুপুর উপজেলা থেকে বাগান দেখতে আসা হাফিজুর রহমান বলেন, আমি শুনেছিলাম দাড়িয়াপুর গ্রামে আঙুরসহ বিভিন্ন ফলের চাষ হয়। আমিও উদ্যোক্তা হতে চাই। সেই লক্ষ্যে এখানে এসেছি। আঙুরও খেয়েছি। আঙুর অনেকটাই মিষ্টি। এখানে এসে নিজের চোখে আঙুর বাগান দেখে অনেক ভালো লাগছে। এই ফল চাষের কিছু নিয়ম শিখতে পারেছি।

জাহিদুল ইসলামের ভাতিজা মো. রাকিবা মিয়া বলেন, বাগানে পানি দেওয়া থেকে শুরু করে অনেক কাজ আমি করি। এছাড়াও বাগানের আঙুর ও চারা আমি নিজেই বিক্রি করি। বাগানের আঙুর মাছি ও পোকা মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে মাঝে মধ্যেই স্প্রে করতে হয়। বাগান দেখতে আশে পাশের এলাকার অনেকেই আসেন।

জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, আমার স্বামীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিলো বাগান করে বিষ মুক্ত আঙুর খাওয়ার। নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে ইউটিউভ ও ঝিনাইদহের রশিদ নামের এক ভাইয়ের পরামর্শে আঙুর চাষের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আঙুরের ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। আঙুর খেতেও অনেক মিষ্টি। গ্রামের অনেককেই আঙুর দেওয়া হয়েছে। আঙুর বাগান আরও বড় করার ইচ্ছে আছে আমাদের।

টাঙ্গাইল খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) নজরুল ইসলাম বলেন, সখীপুরের পাহাড়ি লাল মাটিতে আঙুরসহ দেশি-বিদেশি নানা ধরনের ফলের চাষ হচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে ফল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। প্রশিক্ষণ দিয়ে আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছি আমরা।

তিনি আরও বলেন, জাহিদুল ইসলামের আঙুর বাগানের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। তার আঙুরের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। তিনি নিয়মিত উত্তোলন করে তার বাগানের আঙ্গুর বাজারজাত করছেন। নিবিড়ভাবে এই ফলটির যত্ন নিতে পারলে এটা একটা সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে আমাদের দেশে গণ্য হবে এবং বিদেশ থেকে যে পরিমাণ আঙুর আমদানি করা হয়, তা আর করতে হবে না। ’ জাহিদুলের মতো যারা বাগানে বা ছাদে আঙুরের চাষ করবেন তাদের সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।

Comments (0)
Add Comment