সৌদি আরবের জেদ্দায় মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে ইউক্রেন। এই বৈঠকে রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসানে একটি আংশিক যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা উপস্থাপন করবে কিয়েভ। মঙ্গলবার (১১ মার্চ ) এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
এই পরিকল্পনা উপস্থাপনের মূল উদ্দেশ্যে, কিয়েভের সবচেয়ে বড় মিত্র ও সহায়তাকারী যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সমর্থন আদায়। নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তিন বছরের যুদ্ধের দ্রুত অবসানে কিয়েভকে ‘আপোষ’ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
যুদ্ধবিরতি আলোচনার আগে মস্কোয় ইউক্রেনের বড় আকারে ড্রোন হামলা
এমন সময় সৌদি আরবে এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হতে চলেছে যখন রাশিয়া ও ইউক্রেন, উভয়ই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে। অপরদিকে, ইউক্রেনকে সামরিক ও গোয়েন্দা তথ্য সহায়তা বন্ধ রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
জানা গেছে, মস্কোসহ সমগ্র রাশিয়াজুড়ে রাতভর ড্রোন হামলা চালিয়েছে কিয়েভ। মস্কোতে ৯১ ও সব মিলিয়ে ৩৩৭ ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে রাশিয়া।
গত মাসে তুমুল বাগবিতণ্ডার মাঝে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর অনুতাপ প্রকাশ করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে একটি চিঠি পাঠান ইউক্রেনের নেতা।
জেদ্দায় সৌদি শাসকদের সঙ্গে দেখা করতে আসলেও আজকের বৈঠকে যোগ দেবেন না জেলেনস্কি। তার শীর্ষ তিন সহযোগীকে সেই দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।
অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে এই বৈঠকে যোগ দেবেন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজ।
বৈঠককে সামনে রেখে সামরিক সহায়তা স্থগিতের বিষয়ে সমাধানে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেন ওয়ালজ।
রুবিও বলেন, ‘আশা করি বৈঠক ভালো হবে এবং আপনাদের জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসতে পারব।’
হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি চুক্তিতে সই করার কথা ছিল দুই নেতার। এই চুক্তি সাক্ষর হলে আগে অস্ত্র সরবরাহের বিপরীতে পেমেন্ট হিসেবে ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও ব্যবহারের সুবিধা পাবে মার্কিনীরা।
পরবর্তীতে জেলেনস্কি জানান, তিনি এখনো চুক্তিতে সই করতে রাজি।
তবে রুবিও নিশ্চিত করেছেন, মঙ্গলবারের আলোচনায় ওই চুক্তির ভূমিকা গৌণ হবে।
হোয়াইট হাউসের বৈঠকে জেলেনস্কি দাবি করেন, রাশিয়ার কোনো অঙ্গীকারে বিশ্বাস রাখার কোনো গ্রহণযোগ্য কারণ নেই। তার এ ধরনের কথা থেকেই মূলত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স উত্তেজিত হয়ে পড়েন, যা অল্প সময়ের মধ্যে তুমুল বাগবিতণ্ডায় রূপ নেয়।
জেলেনস্কি আরও উল্লেখ করেন, এর আগেও কূটনীতিক সমাধান নিয়ে আলাপ হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাশিয়া ২০১৪ সালে হামলা করে ক্রিমিয়া দখল করে এবং পরবর্তীতে ২০২২ সালে পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন চালায়।
তবে পরবর্তীতে ওয়াশিংটনের চাপে ইউক্রেন সীমিত আকারে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি দেয়।
সোমবার নাম না প্রকাশের শর্তে এএফপিকে ইউক্রেনের এক কর্মকর্তা জানান, ‘আমাদের প্রস্তাবে আকাশ ও সমুদ্রপথে হামলায় বিরতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’
‘যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে এই বিকল্পগুলো সহজে বাস্তবায়ন ও নিরীক্ষা করা যায়। এ কারণে এগুলোর মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু হতে পারে’, যোগ করেন তিনি।
রুবিও ইঙ্গিত দিয়েছেন, এ ধরনের প্রস্তাব ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে সন্তোষজনক হতে পারে।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বলছি না শুধু এটুকু বললেই যথেষ্ঠ, কিন্তু এ ধরনের আপোষ থেকেই সংঘাতের অবসান হতে পারে।’
‘দুই পক্ষ আপোষ না করলে যুদ্ধবিরতি ও যুদ্ধের অবসান ঘটবে না’, বলেন তিনি।
রুবিও বলেন, ‘রুশরা সমগ্র ইউক্রেন দখল করতে পারবে না এবং নিশ্চিতভাবেই, ইউক্রেনের জন্য ২০১৪ সালের আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়া অনেক কঠিন ও সময়সাপেক্ষ হবে’, যোগ করেন তিনি।
এই কথার মাধ্যমে রুবিও ২০১৪ সালে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সীমিত আকারে যুদ্ধ ও ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখলের দিকে ইঙ্গিত করেছেন বলে বিশ্লেষকরা মত দেন।
ইতোমধ্যে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলেনস্কি। ওই বৈঠকে তিনি স্থায়ী শান্তি চুক্তির বিষয়ে ইউক্রেনের শর্তগুলো নিয়ে আলাপ করেন।
দুই নেতা এ বিষয়ে সৌদি আরবের সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়েও আলোচনা করেন।
রুবিও জানান, তিনি আশা করছেন না জেদ্দায় বসে ইউক্রেনীয়দের সঙ্গে ‘মানচিত্রে রেখা টেনে’ চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবেন।
তবে তিনি জানান, এই বৈঠক থেকে তিনি যা যা জানবেন, তা রাশিয়ার কাছে উপস্থাপন করবেন।
গত মাসে রুবিও ও ওয়ালজ সৌদি আরবে রুশ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।