জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর বিক্ষোভকারীদের আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন হংকংয়ের টাইকুন, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব জিমি লাই। তিনি এতে ব্রেন ও ধৈর্য্য ব্যবহার করতে বলেছেন। এ যাবত চীনের চাপিয়ে দেয়া বহুল বিতর্কিত নতুন নিরাপত্তা আইনের অধীনে যেসব ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার মধ্যে জিমি লাই সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল। সোমবার তার প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা ‘অ্যাপল ডেইলি’তে ঘেরাও করে তল্লাশি করা হয়। এটি হংকংয়ের সবচেয়ে বেশি পঠিত পত্রিকাগুলোর অন্যতম। অভিযান চালানোর সময় তার অফিসের বাইরে কয়েক শত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ দৃশ্য দেখে অসংখ্য মানুষ হতাশা প্রকাশ করেছেন। এদিনই বিদেশি শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করার অভিযোগে বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুধু তা-ই নয়, তার মতো ব্যক্তিকে হাতকড়া পরিয়ে বের করে নেয় পুলিশ। এর নিন্দায় ঝড় ওঠে বিশ্বজুড়ে। অবশেষে তিনি জামিনে মুক্তি পান। এরপর তিনি বিবিসিকে বলেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হলো এই ধারার সবেমাত্র শুরু। তিনি বলেন, হংকংয়ের স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ লড়াই সামনে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
হংকংয়ে প্রথম সারির গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি ও সমর্থক জিমি লাই। গত বছর গণতন্ত্রের পক্ষে যে বিক্ষোভ সমাবেশে হংকং অচল হয়ে পড়েছিল তিনি তার সমর্থক। সোমবার তিনি ও অন্য ৯ জন অধিকারকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এভাবে গ্রেপ্তার অভিযানে আতঙ্ক বৃদ্ধি পায় যে, চীন এভাবেই হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি অধিকার কর্মী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন অব্যাহত রাখবে।
বিবিসির ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজআওয়ারে জিমি লাই বলেন, সোমবার সকালে যখন তিনি দেখতে পান তার বাড়িতে পুলিশ, তখন তিনি বিস্মিত হয়েছেন। এর আগেও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু এবারের গ্রেপ্তার ছিল অধিক আতঙ্কের। কারণ, এবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল চীনের নিরাপত্তা আইনের অধীনে। এই আইনে গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিকে মূল চীনে প্রত্যার্পণের কথা বলা হয়েছে। এ জন্যই তিনি আতঙ্কিত ছিলেন। তার ছেলেরা দাবি করেছেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ভুয়া অভিযোগে। জিমি লাই বলেন, গণতন্ত্রপন্থি অধিকার নিয়ে কাজ করায় তিনি মোটেও অনুতপ্ত নন। তার ভাষায়, আমি যখন জেলে ছিলাম, ঘুমাতে পারি নি। আমি শুধু ভেবেছি, আমার ক্ষেত্রে যা ঘটছে, যে কঠোরতা দেখানো হচ্ছে তাতে আমি কি সেই আগের কাজ করতে পারবো? আমি অন্য মতের কাজ করতে পারবো না। এটা আমার ক্যারেকটার।
জিমি লাই বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, তাদেরকে প্রতিবাদ বিক্ষোভের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হতে হবে। কারণ, নতুন নিরাপত্তা আইন এই অধিকার আন্দোলনের পরিবেশকে অধিক পরিমাণে বিপজ্জনক করে তুলেছে। তার ভাষায়, আমাদেরকে আরো সতর্ক হতে হবে। প্রতিবাদ, প্রতিরোধে আরো সৃষ্টিশীল হতে হবে। আমরা আগে যে উগ্র অবস্থানে ছিলাম, তেমনটা করা যাবে না। যত উগ্র হবো, লড়াইয়ে তবো আমাদের আয়ুষ্কাল কমবে। আমাদেরকে এখন ব্যবহার করতে হবে ব্রেন ও ধৈর্য্য। কারণ এটা এখন এক দীর্ঘ সময়ের লড়াই।
তবে তাকে গ্রেপ্তারের খবরকে চীনা রাষ্ট্রীয় মিডিয়া স্বাগত জানিয়েছিল। তাকে বর্ণনা করা হয়েছে দাঙ্গায় সমর্থনকারী হিসেবে। তার প্রকাশনাকে বলা হয়েছে তারা ঘৃণার মাধ্যমে উস্কানি ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিস্তার ঘটাচ্ছে গুজব। হংকং কর্তৃপক্ষকে ভেঙেচুরে দিচ্ছে