জাবিতে পোষ্য কোটা বাতিল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের জন্য বরাদ্দ পোষ্য কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। পোষ্য কোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত এল।

জানা গেছে, বিকেল ৪টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসে কথা বলেন। তখন শিক্ষার্থীরা অংশীজনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য তাঁকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। বৈঠক শেষ হয় রাত ১২টায়। এর পরই পোষ্য কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির জরুরি সভায় পোষ্য কোটায় ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির বিষয়ে পরে জানানো হবে।

এর আগে পোষ্য কোটা বাতিল চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে আগের মতো কোটা বহালের দাবিতে আজ বুধবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দেন কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ছেলেদের ১০টি আবাসিক হল ঘুরে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে শেষ হয়। এ সময় তারা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান দেন। এতে আটকা পড়েন ভবনে থাকা শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তখন শিক্ষার্থীরা বলছেন, পোষ্য কোটা মানেই অযোগ্যদের সুযোগ করে দেওয়া। এ কোটা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশাসন সংস্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। কিন্তু আমরা তা প্রত্যাখ্যান করে অবিলম্বে পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিল চাচ্ছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাব।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নিবিড় ভূঁইয়া বলেন, ‘অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে আমরা অবস্থান নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কারও ক্ষেত্রেই পোষ্য কোটার যৌক্তিকতা নেই।’

এর আগে বেলা ১১টার দিকে আগের মতো পোষ্য কোটা বহালের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেখানে পোষ্য কোটা বাতিল-সংক্রান্ত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ আনেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রতিবাদ জানাতে এলে এক শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে অনশন শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে সংহতি জানিয়ে অংশ নেয় ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটভুক্ত দুটি সংগঠন ও ছাত্র ইউনিয়নের জাবি সংসদের একাংশ।
প্রশাসনের আশ্বাসে সোমবার ভোরে অনশন স্থগিত করলেও বিকেলে আবারও অনশন শুরু হয়। এর পর রাতে পোষ্য কোটা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত জানালে অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগে প্রতি বিভাগে সর্বোচ্চ চারজন করে মোট ১৪৮ জনের ভর্তির সুযোগ ছিল, এখন সেটা ৪০টি আসনে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। আগে পোষ্য হিসেবে সন্তান, স্ত্রী, ভাই ও বোন এ সুবিধা পেতেন, এখন শুধু সন্তান এ সুবিধা পাবেন। একজন চাকরিজীবী একবারই এ সুবিধা ভোগ করবেন। অর্থাৎ একজন চাকরিজীবীর যদি একাধিক সন্তান থাকেন, তবুও তিনি একটি সন্তানের ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাবেন। আগে চাকরিজীবীরা যে বিভাগে চাকরি করতেন, সে বিভাগেও পোষ্যরা ভর্তি হতে পারতেন, এবার সে সুযোগ রাখা হয়নি।

Comments (0)
Add Comment