আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। তবে একে ঘিরে কয়েকদিন ধরে নির্বাচন কমিশনারদের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতেই হতে পারে। ঐতিহাসিকভাবেও বাংলাদেশের সাধারণত এই দুই মাসেই সংসদ নির্বাচন হয়।
নির্বাচন কমিশনের সূত্রগুলো সাংবাদিকদের জানিয়েছে, তারা নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বর মাসকে বিবেচনা করছেন। কারণ রমজান, এইচএসসি পরীক্ষা এবং বর্ষার কারণে ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ভোটগ্রহণ সম্ভব নাও হতে পারে।
সাধারণত, রমজানে জাতীয় নির্বাচন হয় না। এ ছাড়াও, নির্বাচনের তারিখ এমনভাবে নির্ধারণ করা হয় যাতে ভোটের দিনের আগের তিন সপ্তাহের প্রচারের সময়টাও রমজান মাসে না পড়ে। রমজানে নির্বাচন হলে ভোটারদের অংশগ্রহণ কমে যায় এবং প্রচারণা নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়।
চাঁদ দেখা যাওয়ার ওপর নির্ভর করে ২০২৬ সালে রমজান শুরু হতে পারে ১৭ বা ১৮ ফেব্রুয়ারি।
নির্বাচন কমিশনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে এপ্রিলেও নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। এপ্রিলে এইচএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা শুরু হয়, যা প্রায় এক মাস ধরে চলে। ওই সময়টায় নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।’
নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, পাবলিক পরীক্ষা, ধর্মীয় উৎসব ও বিরূপ আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। এমনকি ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমেও নির্বাচন না করার রীতি রয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস বলেছেন সংস্কারের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এই বছরের শেষে বা পরের বছরের প্রথমার্ধে আগামী সাধারণ নির্বাচন হতে পারে।
সিইসি বলেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে হলে অক্টোবরের মধ্যে সব প্রস্তুতি, আইন ও আচরণবিধি চূড়ান্ত করতে হবে। অতীতে মে-জুন বর্ষাকালে নির্বাচন হয়নি।
এদিকে, মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) ঠাকুরগাঁওয়ে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বলেন, একটা সংস্কার কার্যক্রম চলমান আছে। কয়েকটি সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে তাদের সুপারিশ পেশ করেছেন। আমরা প্রধান উপদেষ্টার ১৬ ডিসেম্বরের বক্তব্য থেকে একটা ধারণা পাই, তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক মতানৈক্য এমন একটি জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায় যে তারা স্বল্প সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন চান, তাহলে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ। যদি আরও সংস্কার করার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব।
এই ইসি আরও বলেন, ‘আমরা এটাও জেনেছি তার বক্তব্য থেকে যে সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর জাতীয় ঐকমত্য একটি কমিশন গঠন করা হবে এবং সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় আগে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে, যাতে করে নির্বাচনী কার্যক্রম দ্রুত হাতে নেওয়া যায়। এমতাবস্থায় আমরা নির্বাচন কমিশন যেটা করছি যে, জাতীয় নির্বাচনকে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত যে ইউন্ডো, সেই ইউন্ডোর যে প্রথম দিকটা অর্থাৎ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে একটা প্রস্তুতি সম্পন্ন করছি। এখন নির্বাচন কখন হবে এটা একটা ঐকমত্যের বিষয়।’