জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হয়েছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। একই সঙ্গে তিনি স্বল্পোন্নত দেশ, ভূবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর উচ্চ প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। নিউইয়র্ক সময় বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ উচ্চপর্যায়ের এ নিয়োগের ঘোষণা দেন।
এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিসের একজন নারী কূটনীতিক জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পেলেন। এই মুহূর্তে জাতিসংঘের বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমাই হতে যাচ্ছেন সর্বোচ্চ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার এই নিয়োগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নিবিড় অংশগ্রহণ ও বাংলাদেশি পেশাদার কূটনীতিকদের গ্রহণযোগ্যতারই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নিয়োগের বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে এ সুযোগ করে দিয়েছেন। আমার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে তিনি আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ, ভূবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর উচ্চপ্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আমার ওপর যে গভীর আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেছেন, আমি কাজের মাধ্যমে তার প্রতিফলন দেখাতে চাই।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সিভিল সার্ভিসে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার রয়েছে ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা। যেখানে তিনি দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কূটনীতি, নীতি নির্ধারণ, অ্যাডভোকেসি, কর্মসূচি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
বর্তমানে তিনি জাতিসংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। এর আগে তিনি জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে রাবাব ফাতিমা জাতিসংঘ শান্তি বিনির্মাণ কমিশনের সভাপতি, ইউএন উইমেন এক্সিকিউটিভ বোর্ড প্রেসিডেন্ট এবং ৭৬তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সহ-সভাপতির মতো মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এলডিসি-৫ এর প্রস্তুতিমূলক কমিটির কো-চেয়ার, ইউনিসেফ এক্সিকিউটিভ বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ও ইউএনডিপি, ইউএনএফপিএ এবং ইউএনওপিএসের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
পেশাদার কূটনীতিক রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র সার্ভিসে যোগদান করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি নিউইয়র্ক ও জেনেভাস্থ জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া কলকাতা ও বেইজিংয়ে বাংলাদেশে কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মানবাধিকার বিষয়াবলীতে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার রয়েছে ব্যাপক অভিজ্ঞতা। লন্ডনস্থ কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটে মানবাধিকার বিভাগের প্রধান, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রতিনিধি এবং একই সংস্থার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসন বিষয়ক আঞ্চলিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করার সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতাও রয়েছে এই কূটনীতিকের।
তিনি টাফ্টস ইউনিভার্সিটির ফ্লেচার স্কুল অফ ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে রাবাব ফাতিমা বিবাহিত এবং এক কন্যা সন্তানের জননী। তার জীবনসঙ্গী কাজী ইমতিয়াজ হোসেনও পেশাদার কূটনৈতিক। বর্তমানে তিনি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।