জগলুলের সঙ্গে আঞ্জু কাপুরের বিয়ে অবৈধ: হাইকোর্ট

রাজধানীর গুলশানের বাসিন্দা বিমানের সাবেক পাইলট প্রয়াত মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের সঙ্গে ভারতীয় নাগরিক আঞ্জু কাপুরের দ্বিতীয় বিয়ে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত জারি রুল নিষ্পত্তি করে বুধবার এ রায় দেন।

হাইকোর্টের রায়ের ফলে স্ত্রী হিসেবে আঞ্জু কাপুরকে দেওয়া জগলুল ওয়াহিদের গুলশান-২ নম্বর এলাকায় বাড়ির উইলের আর আইনগত ভিত্তি থাকছে না বলে জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ।

তিনি বলেন, ওই বাড়িতে এখন বসবাস করা জগলুল ওয়াহিদের মেয়েরা মুসলিম আইন অনুযায়ী তাদের সম্পত্তির অধিকার পাবেন। আমার জানামতে আঞ্জু কাপুর ভারতে চলে গেছেন। তার বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে বলে জানান তিনি।

আজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। তবে প্রয়াত জগলুল ওয়াহিদের দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুর ভারত চলে যাওয়ায় তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না। জগলুল ওয়াহিদের ভাইদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহমেদ মুসান্না চৌধুরী।

প্রয়াত জগলুল ওয়াহিদের দুই মেয়ের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট, ১৮৭২-এর ২ ধারা অনুযায়ী তাদের বিয়ে অবৈধ। কারণ ১৮৭২ এর আইন অনুসারে বরকনে উভয়পক্ষকে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জায়ান, খ্রিস্টান হতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বর মুসলিম হওয়ায় এ আইনের অধীন বিয়ে অবৈধ। এ ছাড়াও একজন বিদেশিকে সম্পত্তি উইল করা যায় না। তাই আঞ্জু কাপুরের নামে প্রয়াত জগলুল ওয়াহিদের করা গুলশানের বাড়ি উইলও বাতিল হবে।

সম্প্রতি জগলুল ওয়াহিদের মৃত্যুর পর গুলশানে প্রায় ১০ কাঠা জমির মালিকানা দাবিতে তার দুই মেয়ে মুশফিকা ও মোবাশ্বেরা বাড়ির সামনে অবস্থান নেন। এ বাড়িতে জন্ম দাবি করে তারা বলেন, ১৯৮৪ সালে তাদের মাকে নিয়ে বাবা গুলশানের এই বাসায়ই সংসার শুরু করেছিলেন। ২০০৫ সালে তাদের মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়। পরে তাদের বাবা আঞ্জু কাপুর নামে এক ভারতীয়কে বিয়ে করেন। তিনি একাই এ বাড়ির ভোগ দখল করছেন।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে হাইকোর্ট ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর স্বপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেন। আদেশের পর জগলুল ওয়াহিদের গুলশান-২ এর ৯৫ নম্বর সড়কের বাসায় তার দুই মেয়ের প্রবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা শুনানি হয় এবং রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

এর পাশাপাশি ভারতীয় নাগরিক আঞ্জু কাপুরের সঙ্গে জগলুল ওয়াহিদের বিয়ে এবং বাড়ির উইল করা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ৪ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর (অ্যামিকাস কিউরি) অভিমত নেন হাইকোর্ট। পরে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে আজ এ রায় দেন হাইকোর্ট।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মোস্তফা জগলুল মারা যান। তার ভাই ও বোনদের মধ্যে শুধু সংগীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ ছাড়া আর কেউ দেশে নেই।

Comments (0)
Add Comment