আজ দুপুরে মারা গেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক অজয় রায়। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন।
অধ্যাপক অজয় রায়ের আরেকটি পরিচয় তার ছেলে ব্লগার-লেখক অভিজিৎ রায় ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির উল্টো পাশে ‘জঙ্গি’ হামলায় নিহত হন।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের প্রায় সব গণতান্ত্রিক ও নাগরিক আন্দোলনের সামনের কাতারের মানুষ অজয়। পদার্থবিজ্ঞানে একুশে পদকপ্রাপ্ত অজয় রায় স্কুল ও কলেজজীবনে পড়াশোনা করেছেন দিনাজপুরে। ১৯৫৭ সালে এমএসসি পাস করে যোগ দেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। এরপর ১৯৫৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে সেখানে করেন পোস্ট ডক্টরেট। ১৯৬৭ সালে শিক্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও যোগদান করেন এবং অবসর নেওয়ার আগপর্যন্ত সেখানেই কর্মরত ছিলেন।
দেশি–বিদেশি বহু জার্নালে অজয় রায়ের পেপার প্রকাশিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন।
অজয় রায়ের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ঘুরছে তাকে নিয়ে স্মৃতিকথা এবং শোকগাথা। অস্ট্রেলিয়া থেকে আকবর দীপু যেমন লিখেছেনঃ
“অভিজিৎ তার আদর্শের জন্যে প্রাণ দিয়েছে। সেটার জন্য দুঃখ আছে, কিন্তু শোকে ভেংগে পড়িনি। আদর্শের জন্যে পৃথিবীতে প্রান দিতে হয়েছে। আদর্শের জন্যে প্রাণ দেয়াটা কৃতিত্বের, সবাই পারে না- অভিজিৎ সম্পর্কে বাবা অধ্যাপক অজয় রায়।
অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে ব্লগার-লেখক অভিজিৎ রায় ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির উল্টো পাশে জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন। ছেলে হত্যার বিচারের রায় দেখে যেতে পারলেন না অধ্যাপক অজয় রায়। আজ দুপুরে অধ্যাপক অজয় রায় চলে গেলেন বুক ভরা অভিমান নিয়ে।
অধ্যাপক অজয় রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে দেশের প্রয়োজনে ঘরে বসে থাকেননি, রণাঙ্গনে চলে গেলেন।
মৌলবাদবিরোধী আন্দোলনে সরব কণ্ঠ অধ্যাপক অজয় রায়। এমনই দৃঢ়চেতা ও অদম্য এই ব্যক্তিত্ব যিনি মৌলবাদীদের চাপাতির কোপে প্রাণ হারানো ছেলে অভিজিৎ রায়ের লাশের সামনে বলেছিলেন, আই অ্যাম প্রাউড অব মাই সান! সুতরাং, অজয় রায়ের মৃত্যু নিছক মৃত্যু নয়, আমাদের এক সাহসের অন্তর্ধান।
বিদায় বেলায় তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।”