আল্লাহর দেওয়া সব বিধানের মধ্যে নামাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম মানুষের সাধ্যের বাইরে কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়নি। কারণ, ইসলাম সহজাত, জীবনঘনিষ্ঠ ও স্বভাবজাত ধর্ম। অসুস্থ হলেও নামাজ আদায় করতে হয়। তবে নানা অজুহাতে দিন দিন চেয়ারে বসে নামাজ আদায়কারীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার বিধান শারীরিক অক্ষমতার উপর নির্ভরশীল। মূলত মাসআলা কী? এ বিষয়ে আজ জানবো।
সাত ধরণের মানুষ আছে, যারা চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করলে নামাজই হবে না। এজন্য চেয়ারে বসে নামাজ আদায়ের বিষয়ে জানা খুবই জরুরি।
নামাজে ইশারায় উত্তর দেওয়া যাবে?নামাজে ইশারায় উত্তর দেওয়া যাবে?
১. যে ব্যক্তি শরিয়তের দৃষ্টিতে মাজুর নয়, অর্থাৎ কিয়াম, রুকু-সিজদা করতে সক্ষম, তার জন্য যমিনে বা চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করাই জায়েজ নয়। অথচ কখনো কখনো দেখা যায়, এ ধরনের সুস্থ ব্যক্তিও সামনে চেয়ার পেয়ে চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করে নেয়। ফলে তার নামাজই হয় না।
২. শুধু আরামের জন্য অথবা মামুলি কষ্টের বাহানায় চেয়ারে বসে নামাজ পড়লে নামাজ আদায় হবে না। এমনকি যমিনে বসে পড়লেও আদায় হবে না।
৩. যার পায়ে বা কোমরে ব্যথা। দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মে রুকু-সিজদা করে নামাজ পড়লে শরীরে ব্যথা লাগে। কিন্তু তার ব্যথা এ পরিমাণের নয় যে, তা অনেক বেশি। যা সহ্যের বাইরে; বরং এ ব্যথা নিয়ে সে কিয়াম ও রুকু-সিজদা করে নামাজ পড়তে পারে তবে তার জন্যও যমিনে বা চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন করলে নামাজ আদায় হবে না।
৪. যে কিছুটা অসুস্থ। কিন্তু তার অসুস্থতা এ পর্যায়ের নয় যে, সে কিয়াম ও রুকু-সিজদা করে নামাজ পড়তে সক্ষমই নয়, বা এভাবে নামাজ পড়লে তার রোগ বেড়ে যাবে কিংবা রোগ নিরাময় হতে বিলম্ব হবে এমনও নয়। এমন অল্প অসুস্থতার অজুহাতে যমিনে বা চেয়ারে বসে নামাজ পড়লে নামাজ আদায় হবে না।
৫. যে ব্যক্তি নামাজে কিয়াম তথা দাঁড়াতে সক্ষম। যমিনে সিজদাও করতে পারে। কিন্তু পা ভাঁজ করে তাশাহহুদের সুরতে বসতে পারে না। তবে পা ছড়িয়ে বা চারজানু হয়ে বা এক পা বিছিয়ে আরেক পা উঠিয়ে কিংবা এক পায়ের পাতা বিছিয়ে আরেক পা বের করে অথবা উভয় পা বের করে বা অন্য যে কোনো পদ্ধতিতে যমিনে বসতে পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে তার জন্যও চেয়ারে বসে নামাজ পড়া জায়েজ নয়। সে যেভাবে সম্ভব বসেই যমিনে সিজদা করে নামাজ আদায় করবে এবং কিয়াম ও রুকুও যথানিয়মে আদায় করবে।
পুরোপুরি সুন্নত তরিকায় তাশাহহুদের সুরতে বসতে না পারার অজুহাতে তার জন্য চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন ব্যক্তি যমিনে সিজদা না করে চেয়ারে বসে ইশারায় সিজদা করলে তার নামাজ সহীহ হবে না।
৬. যে ব্যক্তি নামাজে কিয়াম তথা দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে সক্ষম নয়, কিন্তু যমিনে বা সমতলে কোনো না কোনো পদ্ধতিতে বসতে পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে, তবে চেয়ারে বসে নামাজ শুরু করলে সিজদা ও কা‘দা (বৈঠক)-এর জন্য যমিনে নামতে সক্ষম নয় তার জন্যও চেয়ারে বসে নামাজ পড়া জায়েজ নয়। এমন ব্যক্তি যেহেতু সমতলে বসে সিজদার ফরয আদায় করতে সক্ষম তাই শুরু থেকেই সে যমিনে বা সমতলে বসে যথানিয়মে সিজদা করে নামাজ আদায় করবে; নতুবা তার নামাজ আদায় হবে না।
৭. যে ব্যক্তি নামাজে কিয়াম তথা দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে সক্ষম, আবার জমিনে বা সমতলে বসতেও পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে, কিন্তু নামাজে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসতে পারে না, তেমনি বসলে আবার দাঁড়াতে পারে না তার জন্যও চেয়ারে বসে পড়া জায়েজ নয়। বরং সে পুরো নামাজ নিচে বসে আদায় করবে, যাতে যথানিয়মে যমিনে সিজদা করতে পারে; নতুবা তার নামাজ সহিহ হবে না।
যারা পুরো নামাজ চেয়ারে বসে পড়তে পারবেন
যে ব্যক্তি নামাজের কিয়াম, রুকু-সিজদা ও কা‘দা (তাশাহহুদের জন্য বসা) কোনোটিই স্বাভাবিকভাবে আদায় করতে সক্ষম নয়; বরং শুধু চেয়ারেই বসতে পারে কেবল এমন অসুস্থ ব্যক্তির জন্য পুরো নামাজ চেয়ারে বসে আদায় করা জায়েজ।
কিন্তু এক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, এই ব্যক্তি যে কিয়াম, রুকু-সিজদা ও কা‘দা (বৈঠক) সবগুলোই যথানিয়মে স্বাভাবিকভাবে আদায় করতে সক্ষম নয় তা বাস্তবসম্মত ও সুপ্রমাণিত হতে হবে। এর জন্য ডাক্তারের পরামর্শের পাশাপাশি কোনো মুফতি সাহেবকে নিজের অবস্থা পুরোপুরি জানিয়ে তার থেকে মাসআলা নিয়ে সে অনুযায়ী আমল করবে। নতুবা নিজে নিজে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে কখনো নামাজ নাও হতে পারে।
মোদ্দাকথা এই যে, যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে অক্ষম তার জন্য বিকল্প পদ্ধতি হল, যমিনে বসে তা আদায় করা। আর যে রুকু-সিজদা করতে অক্ষম তার জন্য বিকল্প পন্থা হল, ইশারায় রুকু-সিজদা আদায় করা। আর যে ব্যক্তি জমিনে বসতে অক্ষম তার জন্য বিকল্প হল চেয়ারে বসা। কেবল প্রথম ও দ্বিতীয় ওযরের কারণে চেয়ারে বসা জায়েজ নয়।