চীনা বাদাম চাষে আরফান আলীর সাফল্য

খরচ কম এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় এবারই প্রথম হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার ভৈরভীকোনা গ্রামের বাসিন্দা মো. আরফান আলী প্রায় ৩০ শতক জমিতে চীনা বাদামের আবাদ করেছেন। পাঁচ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ৫০ হাজার টাকার বাদাম বিক্রির সম্ভাবনা দেখেছেন তিনি। তার দেখাদেখি অনেকেই এই ফসলটি আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

রোগ প্রতিরোধী হিসেবে চীনা বাদামের পরিচিতি রয়েছে। এই বাদামে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, কার্বো-হাইড্রেট ও প্রোটিন আছে। এছাড়া বাদামের অসাধারণ কার্যকরী ফ্যাট শরীর থেকে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এই বাদাম ডায়বেটিকস নিয়ন্ত্রণে সাহার্য্য করে।

কৃষক আরফান আলী বলেন, চীনা বাদাম চাষে খরচ নেই বললেই চলে। তবে গরুর গোবর থাকলে জমিতে প্রয়োগ করে বাদামের বাম্পার ফলন পাওয়া সম্ভব। জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই চিনা বাদাম চাষ করতে পেরে আমি আনন্দিত।

তিনি আরও বলেন, ধারণা করছি প্রায় ৫০ হাজার টাকার চীনা বাদাম বিক্রি করতে পারবো। জমির পেছনে আমার খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। বাদাম সংগ্রহ করার পর গাছগুলো গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকরা বলেন, শ্রম দিলে ফল আসে। নতুন ফসল চীনা বাদাম চাষ করে তারই প্রমাণ দিলেন কৃষক আরফান আলী। তার ক্ষেতে বাদামের ভালো ফলন হয়েছে। আমরাও ভবিষ্যতে চীনা বাদাম চাষ করতে আগ্রহী।

বাহুবল উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শামীমুল হক শামীম বলেন, কৃষক আরফান আলী প্রমাণ করলেন চেষ্টা করলে সফল হওয়া সম্ভব। তাকে সহযোগিতা করেছি। তিনি শ্রম দিয়েছেন। বাদামের ভালো ফলন হয়েছে। এ ফলন দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও বাদাম চাষে আগ্রহী হয়েছেন। আশা করি বাহুবলের কৃষকরা চীনা বাদাম চাষ করে ভালো ফলন পাবেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, বাহুবলে প্রথম চীনা বাদাম চাষে আরফান আলী চমক দেখিছেন। বাদাম আমাদের কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া বাদাম চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বিনা উদ্ভাবিত ধান, তৈলবীজ, গম, ডালসহ বিভিন্ন ফসলের জাত প্রচলিত জাতের তুলনায় ২-৩ গুণ বেশি ফলন দেয়। এখানে উন্নতজাতের বাদাম আবাদ করে কৃষক যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি তারা দেশের কৃষিতেও ভূমিকা রাখছেন।

তিনি আরও বলেন, উন্নত জাতের বাদাম চাষের কলা কৌশলসহ বিভিন্নভাবে আমরা কৃষকদের মাঠে গিয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের ডা. মিঠুন রায় বলেন, চীনা বাদামে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, কার্বো-হাইড্রেট ও প্রোটিন আছে। একমুঠো চীনা বাদাম খেলে শরীর থেকে অনেক রোগ-বালাই দূরে রাখা সম্ভব। বাদামের অসাধারণ কার্যকরী ফ্যাট শরীর থেকে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। রাতে ১০ থেকে ১৫টি বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। চীনা বাদামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস নির্মূলে বিশেষভাবে কার্যকরী। খাদ্য তালিকায় একমুঠো বাদাম যুক্ত করে অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া এটি শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতেও সহায়তা করে।

তিনি আরও বলেন, চীনা বাদামে মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। শরীরে সঠিক পরিমাণ পুষ্টি না থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। চীনা বাদামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে কঠিন রোগকে বাসা বাধতে বাঁধা দেয়। এই বাদামের সব স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে প্রতিদিন অবশ্যই একমুঠো চীনা বাদাম খাওয়া প্রয়োজন।

Comments (0)
Add Comment