চিনি ও জাঙ্কফুডের প্রতি আসক্তি কমাতে ১১টি কার্যকর উপায়

কখনও কি হুট করেই চকলেট, পেস্ট্রি, চিপস কিংবা কোমল পানীয় খেতে খুব ইচ্ছা হয়। হঠাৎ করে চিনি ও জাঙ্কফুড খাওয়ার ইচ্ছাকেই ফুড ক্রেভিং বলা হয়। আর এটা অনেকসময় বিভিন্ন রোগের কারণ। ডায়েট বা ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য এই অভ্যাস অনেকের জন্য বড় বাধা হয়ে যায়। এই অনিয়ন্ত্রিত ফুড ক্রেভিং বা খাবার খাওয়ার ইচ্ছা থেকেই বেশির ভাগ মানুষের অতিরিক্ত খাওয়া, ওজন বৃদ্ধি ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি হয়।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন কিছু সহজ অভ্যাস ও সচেতনতা মেনে চললে এই ক্রেভিং নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অস্বাস্থ্যকর খাবার ও চিনি খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কমানোর ১১টি কার্যকর ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপায় রয়েছে। এগুলো হলো:

১️. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

অনেক সময় শরীরের পানি শূন্যতাকে আমরা ক্ষুধা বলে ভুল করি। যদি হঠাৎ করে কিছু খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা হয়, তাহলে আগে এক গ্লাস পানি পান করুন এবং কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন। দেখবেন, ইচ্ছাটা কমে গেছে। পানি খেলে শুধু ক্রেভিং কমে না, বরং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ ও ওজন কমাতেও সাহায্য করে।

২️. প্রোটিন খাওয়া

প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, মাছ, দই বা ডাল আপনাকে দীর্ঘসময় পেট ভরা রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনন্দিন খাদ্যে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ালে ক্রেভিং ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে, আর রাতের অকারণ স্ন্যাক্স খাওয়ার প্রবণতা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।

৩️. মনোযোগ সরিয়ে ফেলুন

যখন কিছু খাওয়ার ইচ্ছা জাগে, চিন্তাকে অন্যদিকে সরান। হাঁটতে বের হোন, গোসল করুন, বা কিছুক্ষণ বই পড়ুন। এই মানসিক পরিবর্তন ক্রেভিংয়ের প্রভাব কমায়। চাইলে চুইংগাম  চিবাতে পারেন।

 

৪️. খাবারের পরিকল্পনা করুন

দিন বা সপ্তাহের খাবার আগে থেকে ঠিক করে রাখুন। এতে করে হঠাৎ করে কি খাবো ভেবে অস্বাস্থ্যকর জাঙ্কফুডের খাওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। নির্দিষ্ট সময়ে পরিকল্পিত খাবার খাওয়ার অভ্যাস ক্রেভিং নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৫️. দীর্ঘসময় ক্ষুধার্ত  থাকা 

দীর্ঘ সময় না খেলে শরীরের গ্লুকোজ লেভেল নেমে যায়, তখন চিনি বা ফাস্টফুডের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়। সুতরাং, নিয়মিত ছোট মিল ও স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স সঙ্গে রাখুন। দীর্ঘসময়  ক্ষুধার্ত  না থাকাই ভালো।

৬️. মানসিক চাপ কমান

মানসিক চাপের সময় অনেকেই চকলেট বা মিষ্টিজাতীয় খাবারে আশ্রয় নেন। কিন্তু এটি শরীরে কোর্টিসল হরমোন বাড়ায়, যা ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তাই মানসিক চাপ থাকলে মেডিটেশন ও ব্যায়াম করতে পারেন। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুমাচ্ছেন কি না সেটিও দেখুন কারণ, এই অভ্যাসগুলো মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৭️. পালং শাকের এক্সট্র্যাক্ট গ্রহণ

বাজারে এখন পাওয়া যাচ্ছে লং শাকের এক্সট্র্যাক্ট সাপ্লিমেন্ট, যা ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি চিনি ও চকলেট খাওয়ার ইচ্ছা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। এটি হজম প্রক্রিয়া ধীর করে এবং ক্ষুধা দমনকারী হরমোন সক্রিয় করে।

৮️. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন

ঘুমের অভাব ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, ফলে অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে।
যারা পর্যাপ্ত ঘুমান না, তাদের মধ্যে স্থূলতার ঝুঁকি ৫৫ শতাংশ বেশি। নিয়মিত ও গভীর ঘুম ক্রেভিং নিয়ন্ত্রণে রাখার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।

৯️. সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খান

অপ্রতুল পুষ্টি বা অসম্পূর্ণ খাবার শরীরে ঘাটতি তৈরি করে, যা অতিরিক্ত ক্ষুধা বা মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা বাড়ায়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, ফাইবার, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও ভিটামিন রাখুন। মাঝে ক্ষুধা পেলে ফল, বাদাম, বা সবজি খান তবে জাঙ্কফুড নয়।

১০. খালি পেটে বাজারে যাবেন না

ক্ষুধার্ত অবস্থায় সুপারমার্কেটে গেলে অস্বাস্থ্যকর খাবার কেনার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। কারণ, এসব পণ্য সাধারণত চোখের সমতলে সাজানো থাকে যাতে সহজেই নজরে পড়ে। তাই বাজারে যাওয়ার আগে হালকা কিছু খেয়ে নিন।

১১️. সচেতনভাবে খাওয়ার অভ্যাস করুন 

মাইন্ডফুল ইটিং হলো এমন এক পদ্ধতি যেখানে আপনি খাওয়ার সময় সম্পূর্ণ সচেতন থাকেন খাবারের গন্ধ, স্বাদ ও অনুভূতি লক্ষ্য করেন। এটি আপনাকে বুঝতে সাহায্য করে, আপনি সত্যিই ক্ষুধার্ত কিনা নাকি শুধু ইচ্ছেমতো খেতে চাইছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, সচেতনভাবে খাওয়ার অভ্যাস অতিরিক্ত খাওয়া কমায় এবং খাবারের প্রতি নিয়ন্ত্রণ বাড়ায়।

অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আকর্ষণ খুব সাধারণ বিষয় গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ নিয়মিতভাবে ক্রেভিং অনুভব করেন। তবে সচেতনতা, পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চললে আপনি সহজেই এই প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন।

সূত্র: হেলথলাইন