দেশে চাহিদার তুলনায় চাল উৎপাদন বেশি হচ্ছে। এরপরও ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে দুই দফায় চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবুও গেল ডিসেম্বরে সরু চাল কেজিতে আট থেকে দশ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা ছাড়িয়েছে, বেড়েছে মোটা চালের দামও। এজন্য করপোরেট কোম্পানিকে দুষছেন খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
ক্ষমতা গ্রহণের পর বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানিতে দুই দফা পুরোপুরি রাজস্ব ছাড় দিযেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এনবিআর বলছে, এতে প্রতি কেজি আমদানিকৃত চাল থেকে ২৫ টাকা রাজস্ব হারাবে সরকার। যদিও এ ছাড়ে কোনো পরিবর্তন নেই বাজারে।
গত ২০ অক্টোবর ২০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে প্রতি কেজি চালে সাড়ে ১৪ টাকা রাজস্ব ছাড় দেয় এনবিআর। এরপর ১ নভেম্বর সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করে দাম কমানো হয় আরও সাড়ে নয় টাকা। পরবর্তীতে ৪ নভেম্বর বেসরকারিভাবে পাঁচ লাখ ৮৭ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ পরিমাণ চাল আমদানি হলে সরকারকে রাজস্ব হারাতে হবে এক হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে এরপরেও প্রতি কেজি চালে দাম বেড়েছে আট থেকে দশ টাকা পর্যন্ত।
রাজধানীর কাওরানবাজার ও মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি বাজারে দেখা যায়, ডিসেম্বরের কয়েক সপ্তাহে প্রতি বস্তা সরু চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে আড়াইশ’ টাকা, যাতে খুচরা পর্যায়ে কেজিতে আট থেকে দশ টাকা বেড়ে দাম ছাড়িয়েছে ৮০ টাকা। মোটা চালের দামও সর্বনিম্ন ৬০ টাকা। আমদানি না করলেও দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব জানিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা দায় দিচ্ছেন করপোরেট কোম্পানির ঘাড়ে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, দেশে সাড়ে তিন কোটি টনের কিছু বেশি চাহিদার বিপরীতে চলতি বছর চালের উৎপাদন চার কোটি টন ছাড়িয়েছে। এরমধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে বন্যায় ১১ টন ধান নষ্ট হলেও উৎপাদন চাহিদার তুলনায় বেশি। এরপরেও বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। রাজধানীর গুদাম মালিকরা বলছেন, ধানের দাম বৃদ্ধি আর করপোরেট কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতায় ঊর্ধ্বমুখি চালের বাজার। অপর দিকে দেশের তুলনায় খরচ বেশি পড়ায় ভারতের চাল আমদানিতে আগ্রহী নন ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে এক মৌসুমে সরকারি গুদামে চালের মজুদ সক্ষমতা নেমেছে মাত্র আট লাখ টনে। অপর দিকে চাল মজুদ করায় প্রতিযোগিতায় নেমেছে করপোরেট কোম্পানিগুলো। যার ফলে চাহিদার তুলনায় চালের উৎপাদন বেশি হওয়ার পরেও চালের দাম নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাত ফসকে ব্যবসায়ীদের হাতেই থেকে যাচ্ছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়ৎ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন,কম্পিটিশন করে যখন ধান কিনতে যায় তখন অটোমেটিকলি ধানের বাজার বাড়ে। ধানের বাজার যখন বাড়ে তখন চালের বাজার বাড়ে। বড় বড় করপোরেট কোম্পানিও কম্পিটিশন করে ধান কিনে।
এদিকে এনবিআর চার লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দিলেও আমদানি হয়েছে মাত্র ১১ হাজার টন। শুল্ক কমানোর পরও, কেন এই অনাগ্রহ? তাহলে কি বাস্তবতা না বুঝেই বণিজ্য বিভাগ ও ব্যবসায়ীরা দাম কমাতে শুল্ক কমানোর দাবি করেছিলেন?
এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. আব্দুল কাফী বলেন, এনবিআর ব্যবসায়ীদের চাওয়ার আগেই ছাড়পত্র দিয়েছে। এই ছাড়পত্র দিতে দিতে আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ করে ভারতে চালের দাম বাড়িয়ে ফেলেছে। সরকারিভাবে চিন্তা করতে হবে, কোনো বন্ধু রাষ্ট্রে দেন-দরবার করে চাল তুলনামূলক কম দামে আনা যায় কিনা।
রাজস্ব ছাড়ের পরও দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছার অভাব দেখছেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। বলছেন, সরকারের রাজস্ব ছাড়ে পাওয়া অর্থে নিজেদের পকেট ভারি করছেন ব্যবসায়ীরা।