দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ইতিমধ্যে রাজধানীর সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের করোনা রোগীর আসনগুলো পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে আইসিইউ বেডেরও। এমন প্রেক্ষাপটে জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প ব্যবস্থা করছে সরকার। বিকল্প হিসেবে রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি নতুন ডিএনসিসি মার্কেট (কাঁচাবাজার) ভবনটি বিশেষায়িত হাসপাতালের রূপান্তরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যা দেশের সর্বাধিক আইসিইউ শয্যার হাসপাতাল।
জানা যায়, হাসপাতালটিতে ২০০ শয্যার আইসিইউ ও ১৩০০ সাধারণ শয্যাসহ দেড় হাজার শয্যার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে এটি সম্পন্ন করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী ১৪/১৫ এপ্রিল এর মধ্যে হাসপাতালটি চালু করা সম্ভব হবে আশা করেছেন সংশ্লিষ্ট কাজে দায়িত্বে থাকা কয়েকজন সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
ডিএনসিসি নতুন কাঁচাবাজার ভবনে স্থাপিত হাসপাতালটির পরিচালকের দায়িত্বে আছেন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার এটিওএম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালটি দ্রুত চালুর জন্য আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে হাসপাতালটি চালুর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট কাজে দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডিএনসিসি করোনা আইসোলেশন সেন্টারে বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা সরঞ্জাম স্থাপন করতে হচ্ছে। এগুলো পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপোর্ট (সিএমএসডি) থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। বিরামহীনভাবে এসব চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো স্থাপন করা হচ্ছে।
সেনাবাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ডিএনসিসি মার্কেটে বিপুল সংখ্যক অক্সিজেন ফ্লোমিটার অয়েল মাউন্টেড, অক্সিজেন ফ্লোমিটার সিলিন্ডার, অক্সিজেন সিলিন্ডার, পোর্টেবল অক্সিজেন কনসানট্রেটর, এমএ এক্সরে মেশিন, মাল্টিপ্যারামিটার, পালস অক্সিমিটার, সিরিঞ্জ-পাম্প, আইসিইউ ও এইচডিইউ শয্যা, ইনফিউশন পাম্প, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, সাকশস মেশিন, নেবুলাইজার, পালস অক্সিমিটার, ১২ লেড চ্যানেলের ইসিজি মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে।
এছাড়া সিটিস্ক্যান মেশিন, আরটিপিসিআর মেশিন, ডায়ালাইসিস মেমিন উইথ, ব্লাড গ্যাস এনালাইজার, সেমি অটোমেটেড বায়োকেমিস্ট এনালাইজার, ইনকিউবেটর, সেন্ট্রিফিউজ মেশিন, ব্লাডব্যাংক রেফ্রিজারেটর, পোর্টেবল হ্যালোজেন স্পটলাইট, পোর্টেবল আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানার ইউথ ইসিএইচও, পোর্টেবল এক্সরে ম্যাশিন, অটোমেটিক সেল কাউন্টার, অটোমেটিক বায়োকেমিক্যাল এনালাইজাই, ফ্রিজার ৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, অটোক্লেভ ৭০ লিটার, জিনএক্সপার্ট মেশিন, বায়োসেফটি ক্যাবিনেট, কো-গ্লুমিটার সিসটেম, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন, ৫০০ এমএ এক্সরে মেশিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম।
উল্লেখ্য, প্রায় ৮ বছর আগে নতুন কাঁচাবাজারের জন্য সাত একর জায়গায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিএনসিসি মার্কেটটি নির্মাণ করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন পরে থাকা এক লাখ ৮০ হাজার ৫৬০ বর্গফুট আয়তনের মার্কেটটি গতবছর করোনার আইসোলেশন সেন্টার করা হয়। বর্তমানে বিদেশ-গামীদের করোনা পরীক্ষার ল্যাব হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শুক্রবার সকালে ভবনটিতে সরেজমিনে ঘুরে হাসপাতালে রূপান্তরের কর্ম তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে বিধি নিষেধ থাকায় ভবনের ভেতর ঘুরে দেখা সম্ভব হয়নি।
সম্প্রতি করোনার সংক্রামণ বেড়ে যাওয়ায় এটি বিশেষায়িত হাসপাতালের উদ্যোগ নেয়া হয় বলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার ডিএনসিসি মার্কেট হাসপাতালের করোনা আইসিইউ বেড ও আইসোলেশন বেডের প্রস্তুতকরণ ও কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে করে হাসপাতালটি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে উদ্বোধন করা হতে পারে বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মহাখালীর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মার্কেট হাসপাতালে নতুন ২০০টি আইসিইউ বেড করা হচ্ছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বিরল।’