চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা হচ্ছে দামি ফুল অর্কিডের। ৫ মাস ধরে এ ফুলের চাষাবাদ করে সফলতা পেয়েছেন মোহাম্মদ আলী। তিনি ২০২১ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালকের পদ থেকে অবসরে যান। অবসর জীবনে ভিন্ন কিছু করার উদ্যোগ নিয়ে অর্কিড চাষে উদ্বুদ্ধ হন।
মোহাম্মদ আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নামো শংকরবাটির গুমপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। তিনি চলতি বছরের মে মাসে তার নিজ বাড়ির আঙিনায় বাণিজ্যিকভাবে অর্কিডের চাষাবাদ শুরু করেন। এতে একদিকে যেমন তার অবসর সময় ভালোই কাটছে, তেমনি আয়ও হচ্ছে। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতি ও উপকরণ ব্যবহার করে অর্কিডের চাষ করছেন তিনি।
অর্কিড ফুলের বিভিন্ন রঙ, আকার আর রকম ফেরের কারণে ফুল প্রেমীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে মোহাম্মদের বাড়ির আঙিনা। তার বাড়ির আঙিনা ভরে উঠেছে ফুলে ফুলে। ৫ মাসের ব্যবধানে পেয়েছেন সফলতা। এই ফুলের উচ্চদরের কারণে মুখ ফেরাতে হয় অবলীলায়। যারা অর্কিড প্রেমি, সৌখিন জীবনযাপনের জন্য এই ফুল কিনছেন।
অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন; ‘মানুষ অর্কিড পছন্দ করেন। এই গাছে একটি ফুল দেড়-দুই মাস ধরে ফুটে থাকে। অর্কিড চাষে কাদা-মাটির প্রয়োজন হয় না। নারিকেলের খোসা, ইটের খোয়া কিংবা সুরকি দিয়েই এই ফুল চাষ করা সম্ভব। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় বিশেষ কিছু জাতের অর্কিড বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই আবহাওয়ায় ভালোভাবেই ফুল ফুটছে।’
মোহাম্মদ আলী আরও বলেন; ‘আমি ৫-৬ মাসের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, এ দেশের আবহাওয়ায় এ দেশের উপকরণ দিয়ে স্বাস্থ্যবান অর্কিড চাষ করা সম্ভব। এই ফুলের বাগানে ২৫ জাতের অর্কিড রয়েছে। ফুলের ধরণ ও রঙ প্রায় ৫০০ রকমের। মোট গাছের সংখ্যা বর্তমানে ৫ হাজারেরও বেশি। গত ৫ মাসে প্রায় ৪ লাখ টাকার অর্কিড বিক্রি করেছি।’
দেশের প্রতিটি বাড়ির বারান্দায় বারান্দায় দামি ফুল হিসেবে পরিচিত অর্কিড ছড়িয়ে পড়ুক এমই প্রত্যাশা করছেন এই নতুন অর্কিড চাষি। এরই লক্ষ্য হিসেবে ফেসবুকে ‘পটস অ্যাণ্ড ফ্লোরা’ নামের পেজ খুলে অনলাইনে বিপণন শুরু করেছেন অর্কিডের। সেখান থেকে ভালো সাড়াও পাচ্ছেন তিনি।
উমাইয়া জেমি নামের এক অর্কিড প্রেমি জানান, ‘কেটেলিয়া আর টলুমনিয়া অর্কিড আমার পছন্দের। এগুলো পটস অ্যাণ্ড ফ্লোরা থেকে কিনেছি। দাম বেশি হলেও বিদেশি জাতের অর্কিডগুলো সহজেই পাওয়া যায়।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘মোহাম্মদ আলীর বাগানের অর্কিড স্বাস্থ্যবান এবং মানের দিক থেকেও বিদেশি অর্কিডের সমতুল্য। দেশে যদি আমরা অর্কিড বিক্রির বাজার দেখি তাহলে এটার খুব ভালো সম্ভাবনা আছে। তবে অন্যান্য ফুলের চেয়ে এই ফুলের দাম তুলনামূলক বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে বীজ উৎপাদন করে যদি অর্কিড চাষাবাদ করা হয় তাহলে অর্কিডের দাম অনেকাংশে কমে যাবে। সুতরাং আমাদের দেশে যারা উৎসাহী হয়ে এই ফুলের চাষ শুরু করেছেন, যদি আমরা এটা এগিয়ে নিতে পারি, তবে আগামীতে খুব অল্পদামে অর্কিড পাওয়া যাবে।’