পেইন্টিং থেকে ভাস্কর্য, আবার ভাস্কর্য থেকে পেইন্টিংয়ে তার শিল্পযাত্রা। কঠিন পাথর বা ধাতবে মুগ্ধতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবয়বগুলো জলরঙের জাদুতে মূর্ছনা ছড়ায়। আর এখানেই প্রয়াত শিল্পী হামিদুজ্জামান খান স্যার হয়ে উঠেছিলেন অনন্য।
তারই স্মরণে মেট্রো গ্রুপের অর্থানুকুল্যে তাদের জমি ও স্থাপনায় স্থাপিত হয়েছে গ্যালারী হামিদুজ্জামান। নাম প্রস্তাব করেন হামিদুজ্জামান খানের অন্যতম প্রিয় শিক্ষার্থী স্থপতি ভাস্কর নাজম। এই নামকরণ ভাস্কর হামিদুজ্জামানের সহধর্মিণী শিল্পী আইভি জামান, তাঁদের দু’সন্তান এবং শিল্প শুভানুধ্যায়ীগণ কর্তৃক সমাদৃত হয়। স্থপতি ভাস্কর নাজমের নিজের প্রতিষ্ঠান গ্রিন-এক্সিম গ্লোবাল লিমিটেড মেট্রো গ্রুপের পক্ষে গ্যালারী নির্মাণে মূল ভূমিকা পালন করে। ধানমণ্ডী ২ নম্বর সড়কে ৩৩ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত গ্যালারীটি।
এখানেই ১০ অক্টোবর শুরু হয়েছে প্রয়াত ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান আর তার স্ত্রী শিল্পী আইভি জামানের যৌথ প্রদর্শনী “ছকের বাইরে জীবন” (Larger Than Life)। এটি যেন ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানের কাজের ধারার কথাই বলে। যেমনটা তিনি নিজ সমাজে প্রচলিত কাজের ধারার বাইরের নিজ স্বকীয় ধারার প্রবণতাকে গড়ে তুলেছেন। প্রতিনিয়ত নিজের গন্ডি ছাড়িয়ে নতুন দিগন্তে পৌঁছেছেন তিনি। সে অর্থে তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্যের নাম “ছকের বাইরে জীবন” (Larger Than Life) ।
ভাস্কর হামিদুজ্জামান সারা পৃথিবীর যা কিছু ভালো মনে করেছেন, তাকে আত্মীকরণ শেষে স্থানীয় সংস্কৃতির ধারায় পুনর্নিমার্ণ করেছেন। অবশ্য ”ছকের বাইরে জীবন” তার খণ্ডাংশই উপস্থাপন করবে, সীমিত পরিসরে, উদ্যোগের আতিশয্যে।
গ্যালারী হামিদুজ্জামানের প্রথম প্রদর্শনী ”ছকের বাইরে জীবন” চলবে বৃহস্পতিবার নভেম্বর ৬ পর্যন্ত। প্রতিদিন খোলা থাকবে দর্শনার্থীদের জন্য সকাল এগারোটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। ভাস্কর হামিদুজ্জামানের ঘর ও বাইরের ভাস্কর্য ও চিত্রকর্ম এখন থেকে অত্র গ্যালারী হামিদুজ্জামান থেকে সংগ্রহ করা যাবে। শিল্পী হামিদুজ্জামানের সর্বশেষ অসমাপ্ত কাজও রাখা হয়েছে প্রদর্শনীতে, যা আমাদের নানান চলমান অসমাপ্ত গল্পের কথা বলে। মাস-ব্যাপী প্রদর্শনীতে নানান মাধ্যমের প্রায় পঞ্চাশটি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। ঘরের ও বাইরের ধাতব ভাস্কর্য ছাড়াও জলরঙ, তেল রং, এক্রিলিক মাধ্যমে কাজগুলো করা, কাগজ ও ক্যানভাসে, যেগুলো আগ্রহীগণ সংগ্রহও করতে পারবেন। ভাস্কর্য আছে লোহা, পেইন্টেড মেটাল, পিতলের।
ভাস্কর আইভি জামান বলেন, এইটা আমাদের দুজনের একটা জয়েন্ট শো। এটা চিন্তা ভাস্কর নাজম তিনি একজন স্থপতি। আর গ্যালারি তিনি শুরু করেছেন। তিনি বুয়েটে আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টে পড়ার সময় হামিদুজ্জামান শিক্ষক ছিলেন। ভাস্কর নাজম তখন হামিদুজ্জামানের কাছে ভাস্কর্য নিয়ে ক্লাস করেছেন। সেই স্মৃতি থেকে গ্যালারি হামিদুজ্জামান নামটি ভাস্কর নাজম স্থপতির দেয়া। তিনি গ্যালারির কর্ণধার সি ও।এখানে আরও আছেন মেট্রো গ্রুপের চেয়ারম্যান কবির সাহেব ও আমি আইভি জামান।
আমাদের যৌথ করার কথা ছিল। করব করব ভাবছি। আমাদের বিবাহ ৫০ বছর পূর্তির ডিসেম্বরে, মাত্র কয়েক মাস বাকি। ভেবেছি জাদুঘরে বিরাট করে করব। কিন্তু সুযোগ হয়নি। আমাদের এই প্রথম যৌথ শো। তাও আবার গ্যালারি হামিদুজ্জামানে।এখানে ভাস্কর হামদুজ্জামানের ২৮ টি কাজ আছে, ভাস্কর্য পেইন্টিং মিলে। আইভি জামানের ২১ টি ভাস্কর্য পেইন্টিং ও জলরং মিলে কাজ শোভা পাচ্ছে। আমাদের যৌথ হলো তাও আবার গ্যালারি জামানে।আমরা আনন্দিত হামাদুজ্জামান এর জন্য চলে যাওয়ার ব্যাথা দিন বেঁচে আছি অনুভব করব। তারপরে আমাদের সংগ্রহশালা কাজ চলবে।