প্রতিদিন ৫০-১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। বিপত্তি তখনই বাধে যখন চুল পড়ে ১০০টির অনেক বেশি। যাদের অতিরিক্ত চুল পড়ে তাদের মাথার বিভিন্ন অংশে টাক পড়ে যায়। আপনার মাথার চুল যদি গুচ্ছ গুচ্ছ ভাবে পড়ে যায় কিংবা মাথা থেকে উঠে আসে তাহলে এটি হতে পারে অ্যালোপেশিয়ার কারণ। এখন নিশ্চয় ভাবছেন, অ্যালোপেশিয়া কী? স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে চুল পড়ে গেলে এবং সে অনুপাতে নতুন চুল না গজালে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় অ্যালোপেশিয়া বলে। অ্যালোপেশিয়া হলে কেবল মাথার চুল পড়ে যাবে তা নয়। দাড়ি, বুকের লোম ইত্যাদিও ঝরে যেতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন অ্যালোপেশিয়া হয়েছে?
শিওরসেল মেডিকেলের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন জানান, অ্যালোপেশিয়া হলে কখনো একটি নির্দিষ্ট জায়গার চুল পড়ে, কখনো আবার পুরো মাথা থেকে সব চুল পড়ে যায়। এ রোগ হলে মাথা বা শরীরের চুল হঠাৎ পড়ে যেতে শুরু করে এবং ধারাবাহিকভাবে পড়তে থাকে। কখনো ভুরু বা চোখের পাপড়িসহ সারা শরীরের লোমও পড়ে যায়।
তিনি জানান, যেকোন বয়সের নারী-পুরুষের এ রোগ হতে পারে। এমনকি শিশুদেরও হতে পারে। তবে প্রত্যেকের চুল পড়ার ধরন এক নয়। প্রত্যেকের চুল পড়ার ধরন হয় আলাদা। কারও বেশি কিংবা কারও কম চুল পড়ে।
অ্যালোপেশিয়া কেন হয়?
বংশগত, হরমোনের তারতম্য, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাসসহ বিভিন্ন কারণে অ্যালোপেশিয়া হয়ে থাকে। কারো বংশগত অর্থাৎ পূর্বপুরুষদের কারো অ্যালোপেশিয়ার ইতিহাস থাকলে তাদের অ্যালোপেশিয়া হওয়া খুব স্বাভাবিক। নারীদের অ্যালোপেশিয়া হলে সিঁথি চওড়া হতে থাকে, চুলের মধ্য দিয়ে মাথার ত্বক দেখা যেতে থাকে। মাথার কোনো অংশ থেকে গুচ্ছ চুল পড়ে ফাঁকাও হয়ে যেতে পারে। পুরুষদের অ্যালোপেশিয়া হলে হেয়ার লাইন পিছিয়ে যেতে থাকে। মাথায় টাক পড়তে থাকে।
অনেকের হরমোনের তারতম্যের কারণেও অ্যালোপেশিয়া হয়। মেনোপজের সময় হরমোনের ব্যাপক তারতম্য হলে, জন্ম নিরোধক ওষুধ খেলে এ রোগ হয়ে থাকে। জরায়ুর বিভিন্ন রোগে অপারেশান করে জরায়ু ফেলে দিলেও অতিরিক্ত চুল পড়তে পারে। বিভিন্ন ওষুধের প্রভাব, কেমোথেরাপির প্রভাবেও চুল ঝরে যেতে পারে।
বিভিন্ন রোগ যেমন থাইরয়েড, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম, লুপাস, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বা সোরিয়াসিস এর কারণেও অ্যালোপেশিয়া হয়। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, অপুষ্টি, অপর্যাপ্ত ঘুম, দিনের পর দিন রাত জেগে থাকা ইত্যাদি কারণেও অ্যালোপেশিয়া হতে পারে। অনেকে কোনো নিয়ম না মেনে নিজের ইচ্ছেমতো ডায়েট করে। ক্রাশ ডায়েট করলে অতিরিক্ত ওজন কমে যেতে পারে। আবার কিডনি-হার্ট ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। অপুষ্টিজনিত কারণে চুলও ঝরে যেতে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
অ্যালোপেশিয়া হলেই যে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে তা নয়। তবে যদি চিরুনি ভর্তি করে অস্বাভাবিকভাবে চুল পড়ে, বাসার বিভিন্ন জায়গায় চুল পড়ে থাকে, বিছানা-বালিশেও অস্বাভাবিক চুল পড়ে থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যেখানে সেখানে যার তার কাছে না গিয়ে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখাবেন। অতিরিক্ত চুল পড়তে থাকলে মাথায় এক বা একাধিক জায়গায় এক সেন্টিমিটার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার এলাকার চুল একসাথে খালি হয়ে যেতে পারে। মাথার সামনের অংশ দ্রুত খালি হতে থাকবে।
ঘরোয়া প্রতিকার
অ্যালোপেশিয়া হলে ঘরোয়া বিভিন্ন হ্যাকস যে খুব কাজে দেবে তা নয়। তবে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে, মাথার ত্বকে পুষ্টি পৌঁছাতে যত্ন নিতে পারেন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন তেল মালিশ করতে পারেন। স্ক্যাল্পে ঘৃতকুমারী রস কিংবা পেঁয়াজের রস ঘষে ঘষে লাগাতে পারেন। চাইলে ক্যাস্টর অয়েলও লাগাতে পারেন। কেননা ক্যাস্টর অয়েল নতুন চুল গজাতে কাজ করে। এর পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার যেমন প্রোটিন ও বায়োটিন সমৃদ্ধ খাবার খান। ডিম, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, বীজ ইত্যাদি খেতে পারেন। এর পাশাপাশি দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান।