গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তিতে সই

দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর মতপার্থক্য কাটিয়ে অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করেছে হামাস ও ইসরায়েল। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) কাতারের দোহায় এই চুক্তি সই হয়। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।

টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় চুক্তিটি সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দোহায় ইসরায়েল, হামাস, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিনিধিরা চুক্তিতে সই করেছেন।

ইসরায়েল বলছে, ৯৮ জন জিম্মি বর্তমানে গাজায় বন্দী রয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ৩৬ জন মৃত। তাদের মরদেহ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ নিশ্চিত করেছে।

চুক্তির প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহে অর্থাৎ ৪২ দিনের মধ্যে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। যাদের মধ্যে থাকবে- শিশু, নারী, নারী সৈন্য, বয়স্ক এবং অসুস্থ মানুষ। ইসরায়েল বিশ্বাস করে যে এই ৩৩ জনের মধ্যে বেশিরভাগ জীবিত। আর কিছু মৃত। এর বদলে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। ইসরায়েলি সেনারা গাজার ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল থেকে সরে আসবে।

পাশাপাশি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিরা ফিরে আসতে পারবেন এবং প্রতিদিন ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারবে।

প্রথম ধাপের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে চুক্তির পক্ষরা একটি সম্ভাব্য দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা করবে, যা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে অবশিষ্ট সমস্ত জিম্মিদের মুক্ত করা হবে।

চুক্তির মধ্যস্থতাকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কাতার বুধবার গাজায় শুরু হওয়া ১৫ মাসের যুদ্ধের অবসান ঘটানোর একটি চুক্তির ঘোষণা দেয়। কিন্তু নেতানিয়াহু এর কোনো ঘোষণা দেননি। তিনি বলেছিলেন যে কিছু শর্ত রয়েছে, সেগুলো চূড়ান্ত হলেই চুক্তির বিষয়ে জানাবেন।

বৃহস্পতিবার সকালে ইসরায়েল চুক্তিটি অনুমোদন করবে বলে নির্ধারণ হয়েছিল। কিন্তু নেতানিয়াহুর দুই মন্ত্রী এতে বাধ সাধেন। তারা জানান, এই চুক্তি হলে সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করবেন। এতে সরকার ভেঙে যাবে। ফলে মন্ত্রিসভার বৈঠক বিলম্বিত হয়। নেতানিয়াহুর কার্যালয় এ অবস্থায় জানায়, কাতারে হওয়া চুক্তির বেশ কিছু বিষয়ে আপত্তি আছে। তিনি হামাসের বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তে শর্ত পরিবর্তনের অভিযোগ তুলেছিলেন।

আমেরিকান কর্মকর্তারা যখন শেষ মুহূর্তের সমস্যা স্বীকার করেছেন, তখন একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা টাইমস অব ইসরায়েলকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভোট বিলম্বের একটি মূল কারণ ছিল তার জোট অক্ষত রাখার চেষ্টা। এই কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেছেন যে মতপার্থক্যগুলি তুলনামূলকভাবে ছোট ছিল। কিন্তু নেতানিয়াহুর জোট টেকানোর রাজনীতির কারণে চুক্তি বিলম্ব হচ্ছে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই হওয়ার পর গাজার খান ইউনিসে উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত

চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে বাকি জিম্মিদের মুক্তি, ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং স্থিতিশীল শান্তি ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে। তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপে জিম্মিদের মৃতদেহ ফেরত এবং গাজা পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করা হবে, যা কয়েক বছর সময় নিতে পারে।

এদিকে কাতার-যুক্তরাষ্ট্র বুধবার যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা দিলেও এরপর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে আরও ৮৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় এ নিয়ে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার ৮০০ জনে পৌঁছেছে।

Comments (0)
Add Comment