অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বর্বরতার রেকর্ড গড়ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী—আইডিএফের টানা ছয় দিনের আগ্রাসনে উপত্যকায় প্রাণ হারিয়েছে ৬ শতাধিক ফিলিস্তিনি, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। সোমবারও (২৪ মার্চ) উপত্যকাজুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে নেতানিয়াহুর বাহিনী। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সংগঠনটির আরও এক শীর্ষ নেতা নিহতের খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সম্প্রচার মাধ্যম আল-জাজিরা।
খান ইউনিস, রাফাহ, দেইর-আল-বালাহ, নুসেইরাহসহ বিভিন্ন স্থানে আবাসিক স্থাপনা আর শরণার্থীশিবির লক্ষ্য করে হামলা চালানো হচ্ছে। আবারও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে হাসপাতালগুলোকে। ভয়ংকর হামলা চালানো হয়েছে আল নাসের হাসপাতালে। এখন পর্যন্ত দুই জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। যাদের মধ্যে একজন হামাস নেতা ইসমাইল বারহৌম।
এর আগে গত শনিবার গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় হামাসের শীর্ষ নেতা সালাহ আল-বারদাওয়েল ও তাঁর স্ত্রী নিহত হয়েছেন। আল–জাজিরার তথ্য মতে, গত ছয় দিনে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত পাঁচজন হামাস নেতা নিহত হয়েছেন।
আল-জাজিরার তথ্যমতে, ইসমাইল বারহৌম নামের ওই হামাস নেতা নাসের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ইসরায়েলি সেনাদের কাছে এই খবর ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। হামাস নেতার পাশাপাশি এই হামলায় নিহত হয়েছে ১৬ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি কিশোর। আহত হয়েছে আরও অন্তত ৮ জন, যাদের সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
মূলত হাসপাতালের তৃতীয় তলার নির্দিষ্ট একটি ওয়ার্ডে হামলা চালানো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় আগুন ধরে যায় পুরো বিভাগে। আইডিএফের হামলায় হাসপাতালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, ২১ দিন ধরে উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে না নেতানিয়াহু প্রশাসন। চিকিৎসা সরঞ্জাম, জ্বালানি সংকট আর হামলার তীব্রতায় উপত্যকাজুড়ে সব হাসপাতালেই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া দিন দিন কঠিন থেকে আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া, ইসরায়েলি হামলায় যে পরিমাণ মানুষ হতাহত হচ্ছে, সে তুলনায় চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সক্ষমতা নেই হাসপাতালগুলোর।
ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না, তার ওপর কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই হাসপাতালে হামলা চালাচ্ছে—একে আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন বলছেন ফিলিস্তিনিরা। নাসের হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবী সিধ্ব বলেন, ‘নেতানিয়াহু পাগল হয়ে গেছে! অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই, আমরা জানি সে রক্তপিপাসু। নেতানিয়াহু কোন হাসপাতালে আছে সেই খবর যদি হামাসের কাছে থাকেও, তারা কোনো দিনও ওই হাসপাতালে হামলা চালাবে না। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ তা করতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৮৬৪ সালে জেনেভা কনভেনশন স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যাতে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলার বিষয়ে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইসরায়েল যা করছে তা বর্বরতা ছাড়া আর কিছু নয়। কোনো সভ্য জাতি, সভ্য মানুষ এমন করতে পারে না। সন্ত্রাসী নির্মূল এবং আরও যা–ই আপনার বাহানা হোক না কেন—আপনি কোনোভাবেই একটি হাসপাতালে বোমা ফেলতে পারেন না। কোনোভাবেই, কোনো অজুহাতেই এটি গ্রহণযোগ্য নয়।’
সিধ্বের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়েছে হাসপাতালের ৩০টি বেড, পুরো ওয়ার্ডের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা। কয়েক জায়গায় ধসে পড়েছে সিলিং, দরজা-জানালাগুলোও উড়ে গেছে। গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত প্রাণ গেছে ৬ শতাধিক ফিলিস্তিনির। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর উপত্যকায় নেতানিয়াহু প্রশাসনের বর্বরতা শুরুর পর গত ১৮ মাসের যুদ্ধে গাজায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের ১৭ হাজারই শিশু।