ঈদ আসন্ন, আর এর সঙ্গে বাজারে ঈদকেন্দ্রিক পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। তবে এই বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে গরু ও মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে, যা স্বল্প আয়ের মানুষের ঈদের আনন্দে ছায়া ফেলছে। অন্য পণ্যের দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকলেও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ঈদের আগে বাজারে সরকারের মনিটরিং যথাযথ না থাকায় মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে। তবে ডিমের দাম কিছুটা কমে যাওয়ায় এবং ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়ায় ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
মাংসের বাজারে অস্থিরতা: রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংসের দাম বেড়ে ৮০০ টাকা কেজিতে পৌঁছেছে, যা চার-পাঁচ দিন আগেও ছিল ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা। মালিবাগ বাজারে কথা হয় এক ক্রেতা আল আমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ইচ্ছা ছিল ঈদের আগের দিন টাটকা মাংস কিনে রান্না করব। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, দাম আরও বাড়বে। তাই এখনই কিনতে হলো।
মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের সময় ব্যক্তিগতভাবে গরু জবাইয়ের প্রবণতা বেড়ে যায়। ফলে বাজারে গরুর চাহিদা বাড়ে। বিক্রেতা মো. খোকন জানান, অনেকে না বুঝে বেশি দামে গরু কিনছেন। ফলে আমাদেরও বাড়তি দাম গুনতে হচ্ছে।
গরুর মাংসের পাশাপাশি ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দামও বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকা কেজিতে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৯০-২১০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম বেড়ে হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা, আগে যা ছিল ৩১০-৩২০ টাকা।
বাজারে অন্য পণ্যের দাম কমলেও লেবু ও শসার দাম এখনো বেশ চড়া। বড় লেবু প্রতি হালি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মাঝারি লেবু ৬০-৭০ আর ছোট লেবু ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শসার দামও ৫০-৬০ টাকা কেজিতে রয়েছে।
ডিমের বাজারে স্বস্তি: মাংসের দামে ঊর্ধ্বগতি থাকলেও ডিমের বাজারে কিছুটা স্বস্তি নেমে এসেছে। এক সপ্তাহ আগেও যেখানে প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১৩৫ টাকা, এখন তা নেমে এসেছে ১২০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা কমে যাওয়ায় ডিমের দাম কমেছে, যদিও ফার্ম পর্যায়ে ডিম উৎপাদন খরচের নিচে বিক্রি হচ্ছে।
তেলের সংকট কাটল: কয়েক মাস ধরে চলা বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট অবশেষে কেটেছে। বাজারে এখন রূপচাদা, বসুন্ধরা, স্টারশিপ, তীর, ফ্রেশসহ প্রায় সব ব্র্যান্ডের তেল পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীর শান্তিনগর বাজারের বিক্রেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দু-এক সপ্তাহ আগেও কোম্পানির প্রতিনিধিদের বারবার ফোন দিয়ে তেল পাওয়া যাচ্ছিল না। অথচ এখন তারা তেল সরবরাহ করতে আগ্রহী।
সরকার নির্ধারিত মূল্যে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে, ২ লিটার বোতল ৩৫২ টাকায় এবং ৫ লিটার ৮৫২ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। সরবরাহ বাড়ায় খোলা তেলের দামও কিছুটা কমেছে।
অন্য নিত্যপণ্যের দাম অপরিবর্তিত: বাজারে সেমাই, চিনি, ডাল ও চালের দাম প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। খোলা লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা কেজি, প্যাকেটজাত লাচ্ছা ৪০-৪৫ টাকায়, চিনি ১২৫-১৩৫ টাকা কেজি, মসুর ডাল ১১০-১৪০ টাকা কেজি, খোলা চিনিগুঁড়া চাল ১২০-১৩০ টাকা ও প্যাকেট চাল ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজ-আলুর দামে পতন: গত বছরের তুলনায় পেঁয়াজ ও আলুর দাম প্রায় ৪২ শতাংশ কমেছে। পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি, যা গত বছর ছিল ৬০-৭০ টাকা। দেশি রসুন ৮০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি, আদা ১০০-২০০ টাকা কেজি এবং আলু ২০-২৫ টাকা কেজি; যা গত বছর ছিল ৩৮-৪০ টাকা।
বাজারে নজরদারির দাবি: কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, দেশে কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। কিন্তু বাজারে দাম বাড়ছে ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে। তাই সরকারের উচিত বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা।