গভীর সমুদ্রবন্দর ও বে-টার্মিনাল নৌ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে উঠবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে প্রায় ৮ হাজার কনটেইনারবাহী মাদার ভেসেল ভিড়বে। অপরদিকে পতেঙ্গা সমুদ্র উপকূলে বে-টার্মিনালে প্রায় ৫ হাজার ধারণক্ষমতার জাহাজ ভিড়বে। আগামী ২০২৫ সাল থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে দুটি বন্দর পূর্ণ সক্ষমতায় পণ্য হ্যান্ডলিং করতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। জাইকার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে।
অপরদিকে বে-টার্মিনালের তিনটি টার্মিনালের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃক প্রথম মালটিপারপাস টার্মিনাল ২০২৪ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে বাকি দুটি টার্মিনাল সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদেশি অপারেটর কর্তৃক পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এর আওতায় নির্মিত হবে। এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন পরবর্তী এর পরিপূর্ণ কার্যক্ষম করার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বন্দরসমূহের সঙ্গে কানেক্টিভটির বিকল্প নেই বলে সংশ্লিষ্ট বন্দর বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বিশেষ করে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরকে আঞ্চলিক বন্দরসমূহের ফিডার বন্দর বা ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হিসেবে ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে ন্যুনতম ৮ হাজার কনটেইনারবাহী মাদার ভেসেল ভিড়তে সক্ষম। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অনুযায়ী বাংলাদেশ অভিমুখী সর্বোচ্চ ৪/৫ হাজার কনটেইনার পাওয়া যাবে। অন্যদিকে বে-টার্মিনাল নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে উক্ত টার্মিনালে অনায়াসে ৪/৫ হাজার কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। যা দেশের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
গভীর সমুদ্রবন্দর ও বে-টার্মিনালকে পরিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় বন্দরসমূহের পণ্য পরিবহনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। কারণ এ দুটি বন্দরের মাধ্যমে যে পরিমাণ কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে তা আঞ্চলিক পর্যায়ের অনেক বন্দর সার্ভিস দেওয়া সম্ভব। বিশেষ করে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রকে এতদঞ্চলের ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। এই পোর্টের যে ড্রাফট তা পার্শ্ববর্তী অনেক বন্দরের চেয়ে বেশি। উক্ত বন্দরে ভেড়া ৭/৮ হাজার কনটেইনারবাহী মাদার ভেসেল থেকে আঞ্চলিক পোর্টসমূহে ফিডার ভেসেলের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করতে পারবে। মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভারত ও চীনের কয়েকটি পোর্ট সহজে মাতারবাড়ী পোর্টকে ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে বন্দর বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
সংশ্লিষ্টদের মতে, থাইল্যান্ডের রেনং বন্দর, মিয়ানমারের সিতুই পোর্ট, ইন্ডিয়ার বাইজেক পোর্টসহ বঙ্গোসাগরের উপকূলীয় কয়েকটি পোর্ট মাতারবাড়ী পোর্টের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করতে পারে। ভারতের জিডিপির ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধির দিক বিবেচনা করলে তাদের ল্যান্ডলক রাজ্যসমূহের উন্নয়নে বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করার সম্ভাবনা রয়েছে। একইভাবে চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিং ল্যান্ডলক এলাকায় মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের সুযোগ রয়েছে। কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের ঘুমদুম পর্যন্ত ট্রান্স এশিয়া রেলওয়ে কানেক্টিভিটি স্থাপন হলে মাতারবাড়ী থেকে ৭/৮ ঘণ্টায় ঘুমদুম হয়ে মিয়ানমারের মাধ্যমে কুনমিং পর্যন্ত পণ্য পরিবহন খুবই সহজ হবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। যা মাতারবাড়ী থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহনের চেয়ে কম সময় লাগবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে একটি কনটেইনার ও একটি মালটিপারপাস জেটি থাকবে।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শাহজাহান সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সাংবাদিকদের বলেছেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর হবে আঞ্চলিক পোর্টসমূহের হাব। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় বন্দরসমূহের ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট হিসেবে গভীর সমুদ্রবন্দর ব্যবহৃত হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, গভীর সমুদ্রবন্দর দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য এবং আঞ্চলিক ট্রান্সশিপমেন্ট হিসেবে গড়ে তুলতে এখন থেকে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করতে হবে। যাতে করে প্রথম দিন থেকে গভীর সমুদ্রবন্দরকে তার পূর্ণ কার্যক্ষম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তিনি একই সঙ্গে বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে বর্তমানে বে-টার্মিনাল নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু করা জরুরি। তিনি বে-টার্মিনালকে দেশের ফাস্ট ট্র্যাক বা অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।