বছরখানেক ধরে চলা টানাপোড়েন ও পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের পর গণফোরামের বিবদমান দু’পক্ষ এক হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, গণফোরামে আর সমস্যা নেই।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোট করে ভোটে অংশ নিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদে প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার পর গণফোরামে ভাঙন ধরে। গত বছরের এপ্রিলে কাউন্সিলে মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে সরিয়ে ড. রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। বাদ পড়েন নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। ড. কামাল-রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন অংশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় মন্টু-সুব্রত অংশ।
সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামালের পাশে ছিলেন মোস্তফা মোহসীন মন্টু। তিনি ড. কামালের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। বলেন, গণফোরামের কাউন্সিলে পূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে। সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। তা তুলে ধরা হবে ৯ জানুয়ারির সংবাদ সম্মেলনে।
ড. কামালের বেইলি রোডের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন না রেজা কিবরিয়া। গরহাজির ছিলেন সুব্রত চৌধুরী ও একাদশ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ছেড়ে গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়া অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। তাদের অনুপস্থিতির বিষয়ে মোস্তফা মোহসীন মন্টু জানান, আবু সাইয়িদ, রেজা কিবরিয়া ও সুব্রত চৌধুরী করোনার কারণে আইসোলেশনের রয়েছেন।
গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া ভোটের আগে গণফোরামে যোগ দেন। সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি। সুব্রত চৌধুরী বলেন, ড. কামাল হোসেনের উদ্যোগে তারা আবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। করোনার কারণে তিনি যেতে পারেননি।
১৯৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. কামাল ১৯৯১-এর ভোটের পর দল ছেড়ে গণফোরাম গড়েন। বয়সের কারণে আর নেতৃত্বে থাকতে চান না জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, সবার অনুরোধে এতদিন নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবার নতুনদের নেতৃত্ব দিতে হবে। তিনি চান, দলের তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নতুন নেতৃত্ব আসুক।
আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার হয়ে যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা মোহসীন মন্টু গণফোরামে আসেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাদের নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল। যে কোনো ঘরে ভাই-ভাইয়ে ঝগড়া হতেই পারে। আবার নিজেরা একসঙ্গে হয়ে যায়। গণফোরামের অভিভাবক ড. কামালকে সামনে রেখে সমস্যার সমাধান করে ফেলেছেন। ২৬ ডিসেম্বর কাউন্সিলের যে তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী ড. কামাল বলেছেন, ভাস্কর্যের বিরোধিতা ধর্মের অপব্যবহার ছাড়া কিছু না। জাতিকে বিভক্ত করার জন্য ভাস্কর্য ইস্যু তৈরি করা হয়েছে। ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থ পাচারে দেশে ক্রান্তিকাল চলছে। অস্বস্তিকর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা জনগণকে নিয়ে মাঠে কাজ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের এমপি মোকাব্বির খান, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এসএম জগলুল হায়দার, শফিক উল্লাহ, মোহসীন রশীদ, এ আর জাহাঙ্গীর প্রমুখ।