করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই একটি দৃশ্যের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। তা হলো- রাস্তায় বা বাজারে বা জনসমাগম হয় এমন স্থানে জীবাণুনাশক ছিটানো। তবে শনিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এসব খোলা জায়গায় জীবাণুনাশক ছিটিয়ে করোনাভাইরাস ধ্বংস করা যায় না।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের জীবাণু থেকে রক্ষা পেতে কোনো স্থান বা বস্তুতে জীবাণুনাশক ছিটানোর বিষয়ে একটি নথি প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাতে বলা হয়েছে, জীবাণুনাশক ছিটিয়ে করোনাভাইরাস ধ্বংস অকার্যকর পদ্ধতি হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, রাস্তা বা বাজারের মতো খোলা জায়গায় জীবাণুনাশক ছিটালে করোনাভাইরাস বা অন্যান্য জীবাণু ধ্বংস নাও হতে পারে। কারণ ময়লা ও বিভিন্ন জিনিসের ধ্বংসাবশেষ জীবাণুনাশকের কার্যকারিতা নষ্ট করে ফেলে।
জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাটি বলেছে, রাস্তা বা ফুটপাতে করোনাভাইরাসের জীবাণু জমে থাকার ধারণা ঠিক নয়। বরং রাস্তা বা খোলা জায়গায় জীবাণুনাশক ছিটালে তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ব্যক্তির শরীরে জীবাণুনাশক ছিটানোকেও কোনোভাবেই সমর্থন করে না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কারণ এতে মানুষের শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনের সমস্যা হতে পারে। ক্লোরিন বা অন্য বিষাক্ত রাসায়নিক মানুষের চামড়ায় পড়লে বা নাক-মুখ দিয়ে শরীরের ভেতরে ঢুকলে তা ভয়ঙ্কর হতে পারে। শরীরে জীবাণুনাশক ছিটালেও হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষমতা হ্রাস পাবে না বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
চার দেয়ালের মধ্যেও জীবাণুনাশক ছিটানোর ব্যাপারে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে সংস্থাটি বলেছে, বদ্ধ জায়গায় শুধু যে অংশে সরাসরি স্প্রে করা হয় সে জায়গাটুকুতেই জীবাণু ধ্বংস হয়। এর বাইরে স্প্রের কার্যকারিতা নেই।
যদি জীবাণুনাশক করতেই হয় তাহলে কোনো একটি কাপড় রাসায়নিকে ভিজিয়ে তা দিয়ে নির্দিষ্ট জায়গা বা বস্তু মুছে ফেলা যেতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
কোনো জায়গায় বা বস্তুতে নতুন করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) জীবাণু কতক্ষণ স্থায়ী হয় তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত যথাযথ কোনো তথ্য বিজ্ঞানীদের কাছে নেই। তবে কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন বস্তুতে কয়েক ঘণ্টা থেকে শুরু করে কয়েক দিন পর্যন্ত ভাইরাসটির জীবাণু থাকতে পারে। কিন্তু এর কোনো কার্যকর (প্র্যাকটিক্যাল) ভিত্তি নেই। কারণ এ গবেষণাগুলো করা হয়েছে ল্যাবরেটরিতে। বাস্তুব পরিবেশে বিভিন্ন বস্তুতে ভাইরাসটি কীভাবে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয় তা এখনও অজানা।