ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ শুরু হওয়ার কথা ছিল সোমবার (২০ জানুয়ারি) থেকে। হচ্ছে না। কারণ, ঢাকার ক্লাবগুলো একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত শুধু প্রথম বিভাগ নয়, কোনো লিগেই তারা খেলবে না। দাবিগুলো হয়তো নতুন, তবে এর মাধ্যমে সেই পুরোনো সত্যিটাই আবার নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকার ক্লাবগুলো নিজেদের স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না এবং সেই স্বার্থ চরিতার্থ করতে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে জিম্মি করে রাখতেও দুবার ভাবে না।
একাধিকবার যে ‘ঢাকার ক্লাবগুলো’ লেখা হয়েছে, এটা খেয়াল করাটা খুব জরুরি। কেন, সেই প্রসঙ্গ একটু পরে। তার আগে ঢাকার ক্লাবগুলোর এমন রাগ করার কারণটা জানিয়ে দেওয়া যাক। জুলাই–জাগরণের পর দেশের সব ক্ষেত্রে সংস্কারের যে আওয়াজ উঠেছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও সেই পথে মাত্রই হাঁটতে শুরু করেছিল।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি পদটির প্রায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে ফেলা নাজমুল হাসানকে বিদায় নিতে হয়েছে। নতুন সভাপতি হয়েছেন ফারুক আহমেদ। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বলা ভালো নতুন সরকারের হাতে বিসিবির দুজন পরিচালক নিয়োগ করার ক্ষমতা ছিল। সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ফারুক আহমেদের সঙ্গে নতুন পরিচালক হিসেবে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদে ঢোকানো হয়েছে নাজমূল আবেদীনকে।
এসব পুরোনো কথা বলার কারণ, নাজমূল আবেদীনের নেতৃত্বেই পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধনের একটা প্রস্তাব তৈরি করছে। ফাঁস হয়ে যাওয়া সেটির প্রাথমিক খসড়া দেখেই ঢাকার ক্লাবগুলোর মাথা খারাপ অবস্থা। গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি প্রস্তাব করলেই তা চূড়ান্ত, মোটেই এমন নয়। প্রথমে এটি বিসিবির পরিচালনা পর্যদে পাস হতে হবে, পরে বিশেষ সাধারণ সভা বা বার্ষিক সাধারণ সভায়।
জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কমিশনের কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর সরকার যেমন বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করছে, বিসিবির প্রস্তাবিত নতুন গঠনতন্ত্র নিয়েও নিশ্চয়ই তা করা হবে। কিন্তু ঢাকার ক্লাবগুলোর সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করার ধৈর্য থাকলে তো! বিসিবিতে তাদের ‘অন্যায্য’ একাধিপত্য শেষ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবের সংগঠকেরা নতুন এক ব্যানারে একত্র হয়ে এর বিরুদ্ধে তাই রীতিমতো আন্দোলনে নেমে গেছেন। তুলেছেন নাজমূল আবেদীনের পদত্যাগের দাবিও। আন্দোলনের সেই পুরোনো অস্ত্র ‘তাহলে আমরা খেলব না।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে বর্তমান গঠনতন্ত্রে ১৭১ জন কাউন্সিলরের ৭৬ জনই ঢাকার ক্লাব থেকে, ২৫ সদস্যের পরিচালনা পর্যদের ১২ জন। যেখানে বিভাগীয় বা আঞ্চলিক পর্যায় থেকে আসেন ১০ জন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে যে অনেকেই ‘ঢাকা ক্রিকেট বোর্ড’ বলেন, এতে তাই আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
তৃতীয় বিভাগ লিগ, অর্থাৎ ঢাকাই ক্রিকেটের চতুর্থ স্তরের একটা ক্লাব, যারা বছরে শুধুই একটা মহাবিতর্কিত ৫০ ওভারের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়, সেই ক্লাব থেকে একজন বিসিবির সদস্য হয়ে যাচ্ছেন; যেখানে একটা গোটা জেলা থেকে, তা রাজশাহী বা খুলনার মতো ক্রিকেট কেন্দ্র হলেই–বা কী, সেখান থেকেও একজনই। কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের ক্রিকেট বোর্ড যে এমন হতে পারে, এটা বিশ্বাস করতেই তো কষ্ট হয়।
পরিচালনা পর্যদের গঠন দেখলে প্রশ্নটা আরও বড় হয়ে উঠবে। ২৫ সদস্যের পরিচালনা পর্যদের ১২ জনই ঢাকার ক্লাবের। বিভাগীয় বা আঞ্চলিক পর্যায় থেকে ১০ জন। বাকি তিনজনের দুজন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনীত, বিভিন্ন সংস্থা ও সাবেক খেলোয়াড়দের কোটা থেকে একজন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে যে অনেকেই ‘ঢাকা ক্রিকেট বোর্ড’ বলেন, এতে তাই আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
প্রস্তাবিত নতুন গঠনতন্ত্রে এই অপবাদ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা আছে। এতে কী আছে না আছে, তা জানানোর দায়িত্বটা ঢাকার ক্লাব সংগঠকেরা নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তাদের দেওয়া তথ্য যদি ঠিক হয়ে থাকে, তাহলে এতে ঢাকার ক্লাবগুলো থেকে কাউন্সিলর–সংখ্যা ৩০–এ কমিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে, পরিচালকের সংখ্যা ৪–এ। জেলা–বিভাগ থেকে আসবেন ১৩ জন পরিচালক। দুজন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং বিভিন্ন সংস্থা ও সাবেক খেলোয়াড়ের কোটায়। পরিচালনা পর্ষদের আকার ২৫ জন থেকে কমে হবে ২১ জনের।