ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ক্রিপ্টো কয়েন ও এ খাতের কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের প্রবণতা বেড়েছে। এ খাতে ধনী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ব্যাংকার, ফান্ড ম্যানেজার এবং ব্যক্তিগত সম্পদ পরামর্শদাতাদের মধ্যে মরিয়া প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এই ধনীরা এখন নব উদ্যমে জেগে ওঠা ডিজিটাল ফাইন্যান্স খাতে বিপুল মূলধন বিনিয়োগ করছেন।
গত নভেম্বরে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের এক সপ্তাহ পরই সিঙ্গাপুরের একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছেন ক্রিপ্টোকারেন্সি খাতের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি জেরাল্ড গোহ। অংশীজনদের সঙ্গে আড্ডায় তিনি সাংবাদিকদের সামনে ডিজিটাল সম্পদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তুলে ধরেন।
জেরাল্ড গোহ জানান, সিঙ্গাপুরের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখন ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ধনীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে দারুণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড এবং চীন থেকে বিনিয়োগকারীরা তাদের সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে এই খাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন।
ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, তার সরকার হবে ক্রিপ্টো–বান্ধব। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিপ্টো নিয়ে গঠনমূলক আইনের প্রত্যাশা বেড়েছে, যা এ খাতে বিনিয়োগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
সিঙ্গাপুর–ভিত্তিক ডিজিটাল অ্যাসেট ব্যাংকিং গ্রুপ সিগনামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেরাল্ড গোহ বলেন, ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ক্রিপ্টো–সম্পর্কিত কোম্পানিগুলোর জন্য একটি উদ্দীপনামূলক প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে এশিয়ার ধনী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভার্চুয়াল সম্পদে বড় বিনিয়োগের জন্য হঠাৎ তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।
অর্থনীতি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জেরাল্ড গোহ জানান, তাঁর কোম্পানিতে নতুন গ্রাহক অন্তর্ভুক্তির হার মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয়ে গিয়েছিল।
সিঙ্গাপুরের বর্তমান বাজারের মনোভাব সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে গোহ ব্যাখ্যা করেন, সাধারণত সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারীরা তাঁদের বিনিয়োগ পোর্টফোলিওতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ক্রিপ্টো সম্পদ সংযুক্ত করার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।
তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ক্রিপ্টো শিল্পে মনোভাবের উন্নতি প্রত্যক্ষ করেছি। জানুয়ারির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, সিঙ্গাপুরের আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রকাশ করেছে, ২০২৩ সালে যেখানে দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে একক পারিবারিক বিনিয়োগ ব্যবস্থার অফিসের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪০০। সেখানে ২০২৪ সালে তা বেড়ে ২ হাজারের বেশি হয়েছে।
পারিবারিক সম্পদের ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষার জন্য এশিয়ার ধনী ব্যক্তিরা এখন সিঙ্গাপুরকেই বেছে নিচ্ছেন। মূলত এই দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিশেষ করে মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড এবং চীনের বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। এই ধনীরা তাদের সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ক্রিপ্টো পোর্টফোলিও বিনিয়োগের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে উল্লেখ করেন জেরাল্ড গোহ।
সিঙ্গাপুরের ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ ইনডিপেনডেন্ট রিজার্ভ জানিয়েছে, তাদের গ্রাহক তালিকায় থাকা পারিবারিক বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর ২০ শতাংশ বেড়েছে।
এই ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লাসাঙ্কা পেরেরা নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, তাঁরা ব্যক্তিগত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনাকারী ব্যাংক এবং পারিবারিক সম্পত্তি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার পক্ষ থেকে আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহ ও অনুসন্ধান লক্ষ্য করেছেন।
এদিকে মার্কিন নির্বাচনের পর ক্রিপ্টো–বান্ধব সরকার এবং বাজারের উত্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গঠনমূলক আইনের প্রত্যাশা বাড়িয়ে তুলেছে। বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প সরকার আরও বেশি ক্রিপ্টো বান্ধব আইন–কানুন করে ঝুঁকি কমানোর উদ্যোগ নিলে এই খাতে ধনী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে।
সিঙ্গাপুরের আর্থিক বাজার ও ক্রিপ্টো নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা মনেটারি অথোরিটি অব সিঙ্গাপুর (এমএএস) অবশ্য ক্রিপ্টোকারেন্সি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ছোট বিনিয়োগকারীদের ব্যাপারে সব সময় সতর্কতার বার্তা দিয়ে থাকে। তারা খুচরা বিনিয়োগকারীদের কাছে ভার্চুয়াল সম্পদের সরাসরি বিপণন সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। কারণ ক্রিপ্টোর এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মগুলোকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হয়।