টাকার পাহাড়। ক্যাসিনো সম্রাট। মিডিয়া মুঘল- কতো নামেই না ডাকা হয় তাকে। কি লাসভেগাস, কি ম্যাকাও, কি সিঙ্গাপুরে তার জুয়ার জমজমাট ব্যবসা। দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে তার রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট আর ক্লাব। বলা হচ্ছে, সদ্যপ্রয়াত মার্কিন ধনকুবের, লাসভেগাস স্যান্ডস-এর প্রতিষ্ঠাতা শেলডন গ্যারি অ্যাডেলসনের কথা। যে লাসভেগাস স্যান্ডস-এর মালিকানায় বহু রিসোর্ট রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়ায়।
ইহুদি শেলডনের বাবা ছিলেন একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার। মাত্র ১২ বছর বয়সে চাচার কাছ থেকে মাত্র ২০০ ডলার ধার নিয়ে তার ব্যবসাজীবনের শুরু।
সে টাকা দিয়ে বোস্টনে পত্রিকা বিক্রির লাইসেন্স কিনেছিলেন। এরপর শুধু এগিয়ে চলার গল্প। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক লাসভেগাস রিভিউ জার্নাল, ইসরাইলি দৈনিক ইসরাইল হ্যায়ম, সাপ্তাহিক ম্যাকর রিশন-এর মালিক। সেপ্টেম্বরে বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা যা তাকে ২৮তম শীর্ষ ধনীর মর্যাদা এনে দেয়।
কিন্তু সবকিছু রেখে মঙ্গলবার ৮৭ বছর বয়সে মারা গেছেন শেলডন। তার মৃত্যুতে মন খারাপ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর। শুধু মন খারাপ বললে ভুল হবে, অপূরণীয় ক্ষতিও হয়ে গেছে তাদের। তিনি যে ছিলেন ওই দুজনের কট্টর সমর্থক এবং অন্যতম অর্থদাতা, পৃষ্ঠপোষক।
ফেডারেল রেকর্ড অনুযায়ী শেলডন এবং তার স্ত্রী মিরিয়াম শুধু গত ১০ বছরেই রিপাবলিকান পার্টির প্রচারণায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা দান করেছেন। ২০১৬ সালে দিয়েছেন ৫৬০ কোটি টাকা। সে বছর তারা শুধু ট্রাম্পকেই দেন ২১৫ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেটিক দুই দলের মধ্যে সম্মিলিতভাবে সবচেয়ে বড় দাতা ছিলেন শেলডন-ই। ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানেরও বড় দাতা ছিলেন শেলডন-মিরি দম্পতি।
ইসরাইলের জন্যও দেদারছে দান করে গেছেন শেলডন। ঢেলেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। গড়ে তুলেছেন নানা দাতব্য সংস্থা, মিডিয়া হাউস। ২০০৭ সালে তিনি বের করেন কট্টর ডানপন্থি পত্রিকা ‘ইসরাইল হ্যায়ম’। বিনামূল্যের পত্রিকাটি বর্তমানে ইসরাইলে সবচেয়ে বেশি পঠিত হয়। বরাবরই নেতানিয়াহুর সমর্থক পত্রিকাটি থেকে তিনি রাজনৈতিক সুবিধা লাভ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী যারাই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তাদের শেলডন সাহায্য করে গেছেন বিভিন্নভাবে। অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে অবৈধ ইহুদি বসতির সমর্থক ছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতি পরিবর্তন করে দেশটিতে দূতাবাস তেলআবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে যাওয়ার পেছনে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পেছনেও তার বড় ভূমিকা রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তার মৃত্যুর পর ট্রাম্পের বক্তব্যেও বিষয়টি উঠে এসেছে।
শেলডনের মৃত্যুতে ট্রাম্প এক শোকবার্তায় বলেছেন, শেলডন সত্যিকারের যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেন। তিনি তার পরিবার, তার দেশ এবং যারা তাকে জানতেন তাদের প্রতি সৎ ছিলেন। তার মৃত্যুতে বিশ্ব হারিয়েছে একজন মহান মানুষকে। তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। নেতানিয়াহু গভীর শোক প্রকাশ করে তাকে ‘ইহুদি জনগণ, ইহুদি রাষ্ট্র এবং ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র জোটের অবিশ্বাস্য চ্যাম্পিয়ন’ বলে অভিহিত করেন।
কিন্তু শেলডনের মৃত্যুতে কি বলছে ফিলিস্তিনিরা। তা জানার আগ্রহ সবার। ‘ফিলিস্তিনের বিপক্ষে শেলডনের এই চরমপন্থি অবস্থান’ অনেক অনেক বছর ধরে মনে থাকবে বলে আল জাজিরাকে বলেন ফিলিস্তিনের একজন আইনজীবী ডায়ান ভুট্টো। আর ওয়াশিংটন ডিসির আরব সেন্টারের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো ইউসুফ মুনায়েম অনেকটা একই সুরেই বলেন, যুগের পর যুগ শেলডনের কাজের প্রভাব আমরা দেখতে পাবো এবং সেগুলো অবশ্যই ভালো হবে না। ফিলিস্তিনিদের জন্য তো নয়-ই।