আমল ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি এক্ষেত্রে মানুষের বিশ্বাস ও কাজের সমন্বয়কে বোঝায়। ইসলাম ধর্মে শুধু বিশ্বাসই যথেষ্ট নয়, বিশ্বাসকে কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল কোরআন ও হাদিসে আমলের গুরুত্ব অনেক বার উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃত মুসলিম হতে, কাজের মাধ্যমে ইবাদত ও ভাল কাজের প্রদর্শন আবশ্যক।
আল কোরআনের দৃষ্টিতে আমল: কোরআনে বহু জায়গায় আমলের গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, তার জন্য রয়েছে পুণ্য। (সুরা আল-আস্র ১০৩:৩)
এ আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, ঈমানের সাথে আমলও অপরিহার্য। ইসলাম শুধু বিশ্বাসে সীমাবদ্ধ নয়, সৎকর্মের মাধ্যমে ঈমানের প্রমাণ দেওয়া প্রয়োজন। আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেন, তাদের কাছে যখন বলা হয়, তোমরা যা কিছু করতে তা আল্লাহর জন্যে করো’, তারা বলে, ‘না, আমাদের পূর্বপুরুষরা যা কিছু করেছেন, আমরাও তা করতে চাই। (সুরা আল-বাকারাহ ২: ১৭০)
এ আয়াত বুঝায় যে, মুসলমানদের জীবনে ভালো আমল করতে হলে, পূর্বপুরুষদের মন্দ কাজ অনুসরণ না করে, আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলতে হবে। হাদিসে আমলের উপর গুরুত্ব অনেক বেশি।
এটি ব্যাখ্যা করে যে, আমাদের সকল আমল যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয়, না হয় তা খালিসভাবে ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না। এছাড়াও, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ অনুসরণ করে, সে সফল হবে। (সহিহ মুসলিম) এটি প্রমাণ করে যে, মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলের উচিত আল্লাহর বিধান অনুযায়ী কাজ করা, কারণ এর মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
আমলের শ্রেণি: আমল বা কাজের শ্রেণি কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তা মূলত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়: ১. ইবাদত: আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত সকল কাজ যেমন: নামাজ, রোজা, হজ, দান ইত্যাদি। ২ দৈনন্দিন কর্ম: যেমন কাজকর্ম, পরিবার দেখাশোনা, ইত্যাদি। এগুলো যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়, তবে তা আমল হিসেবে গণ্য হবে। ৩. ইসলামি নীতি ও শিষ্টাচার: যেমন সত্য বলা, অন্যের প্রতি সদাচরণ করা, অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকা।
আমলের ফলাফল: যে ব্যক্তি সৎ আমল করে, তার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে পুরস্কৃত করবেন। আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি ভালো কাজ করবে, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ পুরস্কার। (সুরা আল-ফুরকান ২৫: ৭০)
এখানে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, সৎকর্মের ফল অনেক বড় এবং তাকে পুরস্কৃত হবে যে ভালো কাজ করবে। সুতরাং আমল ইসলামে শুধুমাত্র কথা নয়, বাস্তবজীবনে ঈমানকে প্রমাণ করার মাধ্যম। কোরআন ও হাদিসে এর গুরুত্ব স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত, জীবনে ভালো কাজগুলো করা এবং তা শুধু মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিবেদিত করা।
একমাত্র এভাবে আমরা সত্যিকারের পুণ্য অর্জন করতে পারবো এবং আল্লাহর কাছে প্রিয় হতে পারবো। তাই, আমাদের প্রতিদিনের আমলগুলো যেন শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে এই কথাগুলোর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন!