মহাকাশে প্রতিনিয়ত আবর্জনা এবং বর্জ্য বেড়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা। চলতি বছরের নভেম্বরে ফুটবল মাঠের আকৃতির সমান এটি আবর্জনা যখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) দিকে ধেয়ে আসতে থাকে তখন রাশিয়ার একটি মহাকাশযান প্রায় পাঁচ মিনিট ইঞ্জিন চালিয়ে আইএসএসকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এই ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা মহাকাশে এখন আর নতুন কিছু নয়। এ কারণে মহাকাশ স্টেশনকে ২০০০ সাল থেকে সংঘর্ষ এড়াতে বহুবার নিজের কক্ষপথ পরিবর্তন করতে হয়েছে।
এমন সম্ভাব্য বিপর্যয়কে ‘কেসলার সিন্ড্রোম’ বলা হয়। এই ধারণাটি প্রথম ১৯৭৮ সালে মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডোনাল্ড কেসলার প্রস্তাব করেছিলেন। এটি এমন একটি বিপর্যয়কে বোঝায়, যেখানে মহাকাশে ধ্বংসাবশেষের মধ্যকার একটি সংঘর্ষ আরও অনেক সংঘর্ষের সূচনা করে। এর ফলে মহাকাশে আবর্জনা এতটাই বেড়ে যেতে পারে যে কৃত্রিম উপগ্রহ এবং মহাকাশ অনুসন্ধান কার্যত অচল হয়ে পড়ার শঙ্কা প্রকট হচ্ছে। খবর সিএনএনের।
মহাকাশে সংঘর্ষের সংখ্যা বাড়ছে: ১৯৫৭ সাল থেকে মহাকাশে ৬৫০টির বেশি বিস্ফোরণ, সংঘর্ষ এবং অন্যান্য ঘটনাগুলো অগণিত ধ্বংসাবশেষ তৈরি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৯ সালে রুশ স্যাটেলাইটের সঙ্গে মার্কিন যোগাযোগ স্যাটেলাইটের সংঘর্ষে চার ইঞ্চি আকারের কমপক্ষে দুই হাজার টুকরা ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয়। এবং ছোট আকৃতির আরও কয়েক হাজার টুকরা তৈরি হয়। বর্তমানে ১০ সেন্টিমিটারের বড় আকৃতির ৪৭ হাজারের বেশি বস্তু নজরদারির আওতায় রয়েছে।
উদ্বেগের বিষয়: মহাকাশে বস্তু কণাগুলো এত দ্রুত চলে যে সামান্য ধাতব টুকরাও মারাত্মক ক্ষতি করার মতো যথেষ্ট। এদের মধ্যে অনেক বস্তু এত ছোট যে সেগুলো নজরে রাখা যায় না। আর এতে সংঘর্ষের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
নিম্ন-কক্ষপথে (১,২০০ মাইল পর্যন্ত) চলে আসলে ধ্বংসাবশেষগুলো সাধারণত কয়েক দশকের মধ্যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুড়ে যায়। তবে উচ্চ-কক্ষপথে অবস্থানরত ধ্বংসাবশেষ শতাব্দীর পর শতাব্দী পর্যন্ত অক্ষত অবস্থায় থেকে যেতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি তৈরি করে। এসব বস্তুকণার মধ্যকার সংঘর্ষের ফল প্রতিনিয়ন আরও অগণিত ধাতব খণ্ড এবং বস্তুকণা তৈরি হচ্ছে।
প্রতিরোধ ও সমাধান: ধ্বংসাবশেষ সরানোর জন্য নতুন প্রযুক্তি ড্র্যাগ সেল তৈরি হচ্ছে। এর মাধ্যমে পুরোনো এবং ভঙ্গুর স্যাটেলাইট দ্রুত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ফিরিয়ে আনে। তবে এগুলোর ব্যবহার অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এছাড়া, নিয়ন্ত্রণমূলক আইন কঠোর করার মাধ্যমে মহাকাশে আবর্জনা কমানোর জন্য আন্তর্জাতিক নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানানো হচ্ছে। এবিষয়ে জাতিসংঘ একটি নতুন চুক্তি অনুমোদন করেছে, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়।
বিজ্ঞানীরা শঙ্কার কথা জানিয়েছেন, মহাকাশে আবর্জনা নিয়ন্ত্রণে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। এটিকে মহাসাগরে প্লাস্টিক দূষণের সমস্যার সঙ্গে তুলনা করা যায়। মহাকাশে ক্রমবর্ধমান আবর্জনা মানবজাতির জন্য বড় হুমকি। এটি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া না হলে, কেসলার সিন্ড্রোমের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তিগত সম্ভাবনাকে পুরোপুরি বিপন্ন করে তুলতে পারে।