ফেসবুকে পোস্ট দিতেই ভাইরাল! কমেন্ট আর লাইকের বন্যায় এক ধাক্কায় সেলিব্রেটি! বিশেষ করে গুজব বা মিথ্যা তথ্য ছড়ানো পোস্টগুলো অনেক বেশি ভাইরাল হতে দেখা গেছে সাম্প্রতিক সময়ে। তবে সেই সুযোগ আর অবারিত থাকছে না।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে ফেসবুক স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পোস্ট প্রকাশের নীতিমালা বা ‘কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ন্ড’ পরিপন্থী বিষয়বস্তু সরিয়ে ফেলছে। সময়ের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি আরও উন্নত করা হয়েছে। ফলে এখন নীতমালা পরিপন্থী ও ক্ষতিকর পোস্ট দিলে তা কেউ দেখার আগেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যাবে। একই সঙ্গে ভাইরাল হতে থাকা কনটেন্ট প্রাধান্য দিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে, প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার আওতায়ও আনা হয়েছে।
মঙ্গলবার ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে এ তথ্য দিয়েছেন ফেসবুকের কমিউনিটি ইনটেগরিটি টিমের রায়ান বারনেস এবং ক্রিস পাওলো। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদিক অংশ নেন।
ফেসবুক থেকে নীতিমালা পরিপন্থী এবং ক্ষতিকর বিষয়বস্তু অপসারণের বিষয়ে রায়ান বারনেস বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, তিনটি পদ্ধতিতে ফেসবুক নীতিমালা অনুসরণের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ও নিশ্চিত করে। এগুলো হচ্ছে- কনটেন্ট পলিসি, কমিউনিটি ইনটেগরিটি এবং গ্লোবাল অপারেশনস। এর মধ্যে কনটেন্ট পলিসি টিম নীতিমালা প্রণয়ন করে। এই টিমে সন্ত্রাসী কার্যক্রম রোধ, শিশু অধিকার এবং মানবাধিকার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সদস্য রয়েছেন। দ্বিতীয়ত, কমিউনিটি ইন্টেগ্রিটি টিম বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে নীতিমালা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে সহায়তা করে। তৃতীয়ত, গ্লোবাল অপারেশনস টিম সরাসরি ব্যবহারকারীর পর্যালোচনার উপর ভিত্তি করে নীতিমালা কার্যকর করে।
তিনি জানান, বর্তমানে ফেসবুকে প্রায় ১৫ হাজার কনটেন্ট পর্যালোচক রয়েছেন, যারা ৫০টির বেশি ভাষার কনটেন্ট পর্যালোচনা করতে পারেন। এই টিম বিশ্বব্যাপী ২০টিরও বেশি সাইটে কাজ করে, যেগুলোর প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ টাইমজোনে অবস্থিত। তারা যেকোনও সময়, যে কোনও স্থান থেকে সার্বক্ষণিক কনটেন্ট পর্যালোচনা করেন।
রায়ান বারনেস জানান, বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে ফেসবুক থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্ষতিকর কনটেন্ট শানাক্ত এবং সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।
তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ৯৯ দশমিক ৬ শতাংশ ভুয়া অ্যাকাউন্ট, ৯৯ দশমিক ৮ শতাংশ স্প্যাম, ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ সহিংসতামূলক ও গ্রাফিক কনটেন্ট, ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ সন্ত্রাসীমূলক, ৯৯ দশমিক ৩ শতাংশ শিশু নগ্নতা ও যৌন নিপীড়ণমূলক এবং ৯৫ শতাংশ অন্যান্য ক্ষতিকর ও নীতিমালা পরিপন্থী কনটেন্ট অপসারণ করা হয়েছে।
ক্রিস পাওয়েল জানান, ফেসবুকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি আরও উন্নত হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে নীতিমালা পরিপন্থী এবং ক্ষতিকর পোস্ট কেউ দেখার আগেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যাবে।
তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী ভাষার বৈচিত্র্য বিবেচনায় ‘এক্সএলএম-আর’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে ফেসবুক খুব সহজেই বিভিন্ন ভাষায় ক্ষতিকর ও নীতিমালা পরিপন্থী শব্দ, বাক্য ও বিষয়বস্তু শনাক্ত করতে পারছে এবং তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যাচ্ছে। ফলে আগে ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষার কনটেন্ট পর্যালোচনার যে সীমাবদ্ধতা ছিল এখন তা অনেকটাই দূর হয়েছে।
ক্রিস পাওয়েল বলেন, যে পোস্ট দ্রুত ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে সেগুলো প্রাধান্য দিয়ে দ্রুততম সময়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ কারণে কোনও কনটেন্ট খুব বেশি শেয়ার হতে থাকলে সেখানে স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও কাজ করছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পল বারনেস ও ক্রিস পাওয়লে জানান, ফেসবুক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের পেজে প্রকাশিত বিষয়বস্তু পর্যালোচনা গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ অনেক সময় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ফেসবুক থেকে কনটেন্ট অপরসারণের অনুরোধ আসে। ফেসবুক এক্ষেত্রে বিশেষভাবে যে বিষয়টি খেয়াল রাখে, তা হলো, জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয় যেন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশে বাধার সৃষ্টি না হয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, ফেসবুক মেসেঞ্জারে যেসব তথ্য আদান-প্রদান হয় সে বিষয়েও এখন ফেসবুক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। তবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ায় মেসেঞ্জারে আদান-প্রদান হওয়া তথ্য ফেসবুক দেখে না। তবে, মেসেঞ্জারে স্প্যাম কিংবা ক্ষতিকর লিংক শেয়ার হচ্ছে কিনা- সে বিষয়ে নজরদারি করে ফেসবুক।