আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ১০ মাস ধরে আটকে পড়া মার্কিন নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামসেদের পৃথিবীতে ফেরার শঙ্কা কেটেছে। দ্রুত একটি মিশন শেষ করে পৃথিবীতে ফেরার কথা থাকলেও মহাকাশযানের ত্রুটির কারণে আটকে যান তারা। পৃথিবীতে তাদের ফেরানো নিয়ে রাজনীতিও শুরু হয়।
তবে বুচ ও সুনিতা আগামীকাল বুধবার (১৯ মার্চ) ফিরতে পারেন। সোমবার (১৭ মার্চ) মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার পক্ষ থেকে তাদের ফেরার দিনক্ষণ জানানো হয়।
নভোচারীদের ফেরাতে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা ও স্পেসএক্স একটি মিশন পরিচালনা করেছে।
সুনিতা ও বুচ দুজনই মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার নভোচারী। তারা গত বছরের জুন থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে আছেন। বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানে ত্রুটির কারণে তারা মহাকাশকেন্দ্রে আটকা পড়েন। মহাকাশযানটিকে খালি অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয় নাসা।
এমন অবস্থায় আটকে পড়া দুই নভোচারীকে ফিরিয়ে আনতে গত বছর থেকেই নানা পরিকল্পনা করতে শুরু করে নাসা। গত জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি দুই নভোচারীকে ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দেন। তাঁদের ফিরিয়ে আনতে নাসার তৎপরতার অংশ হিসেবে ক্রু-১০ মিশনের ফ্লাইটে তাঁদের ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
গত শুক্রবার গ্রিনিচ মান সময় রাত ১১টা ৩ মিনিটে স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানটি ফ্লোরিডায় নাসার কেনেডি মহাকাশকেন্দ্র থেকে যাত্রা শুরু করে। এর ২৯ ঘণ্টা পর গত রবিবার ভোর ৪টা ৪ মিনিটের দিকে এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে পৌঁছায়। এ মিশনে রয়েছেন চার নভোচারী।
তারা হলেন অ্যান ম্যাকক্লেইন, নিকোল আয়ার্স, জাপানের মহাকাশ সংস্থার নভোচারী তাকুয়া অনিশি ও রুশ নভোচারী কিরিল পেসকভ। এই চার নভোচারী প্রায় ছয় মাস মহাকাশ কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। সুনিতা, বুচসহ আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে থাকা সাত নভোচারী তাদের স্বাগত জানান।
এখন নভোচারী অদলবদলের অংশ হিসেবে ক্রু-১০–এর ওই ফ্লাইটে করে সুনিতা ও বুচ ফিরবেন। তাঁদের সঙ্গে থাকবেন নাসার নভোচারী নিক হেগ এবং রাশিয়ার নভোচারী আলেকসান্দর গরবুনোভ। নাসার নভোচারী নিক হেগ এবং নভোচারী আলেকসান্দর গরবুনোভ গত বছরের সেপ্টেম্বরে ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানে সুনিতা ও বুচের জন্য দুটি ফাঁকা সিট নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন থেকে যানটি মহাকাশকেন্দ্রের সঙ্গেই ছিল।
ট্রাম্প এবং তার উপদেষ্টা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক দ্রুত ক্রু-১০ উৎক্ষেপণের আহ্বান জানালে এ অভিযানের সঙ্গে রাজনীতি জড়িয়ে পড়ে। ট্রাম্প ও মাস্ক কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেন, ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেন রাজনৈতিক কারণে সুনিতা ও বুচকে আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে ফেলে রেখেছেন।
সুনিতাদের ফেরার সময় নির্ধারিত থাকলেও কিছুটা আশঙ্কা থেকে গেছে। নাসা বলছে, পরিস্থিতি বাদ সাধলে আবার বদলে যেতে পারে সুনিতাদের ফেরার দিনক্ষণ। মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফেরার জটিল এই প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হলে মহাকাশচারীদের নিয়ে পৃথিবীতে ফিরতে দেরি হতে পারে ড্রাগনের। তা ছাড়া বিজ্ঞানীদের মতে, মহাকাশযানের অবস্থা, পুনরুদ্ধার দলের প্রস্তুতি, আবহাওয়া, সমুদ্রের পরিস্থিতি—নভোচারীদের ফেরার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এই সবকিছুই।
পৃথিবীতে ফেরার পর সুনিতাদের বেশ কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এত দিন মহাকাশে থাকার পর পৃথিবীতে ফিরলে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে তাদের। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন মহাকাশে শূন্য মাধ্যাকর্ষণে থাকার কারণে নানা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় হেরফের ঘটে।
সোমবার সুনিতাদের ফেরার প্রক্রিয়ার সরাসরি সম্প্রচার শুরু হয়েছে। সে সময়ে তাদের মহাকাশযানটির দরজা বন্ধ হয়। এরপর শুরু হয়েছে মহাকাশ স্টেশন থেকে সরে আসার প্রক্রিয়া। তাতে এখনো বেশ খানিকটা সময় লাগবে। ওই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শুরু হবে ফেরার প্রক্রিয়া।