দেশে অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রের জন্য বিভিন্ন সেক্টরে ৯০৫ শ্রমিক নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে ২১৮ জন। ২০২৪ সালে পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ ৫২২ শ্রমিক প্রাণ হারান ও আহত হন ৫২ জন।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ওশি ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়ক মাহমুদা সুলতানা স্নিগ্ধা।
প্রকাশিত ১৫টি দৈনিক সংবাদপত্র এবং ওশি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মাঠপর্যায় থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয় বলেও জানান তিনি।
২০২৩ সালে নিহত হন এক হাজার ৪৩২ জন এবং আহত হন ৫০২ জন। গত বছরের তুলনায় শ্রমিক নিহতের সংখ্যা কমেছে ৫২৭ জন অর্থাৎ ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং আহতের সংখ্যা কমেছে ২৮৪ জন অর্থাৎ ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি বছরের শেষ দিনের আগের দিন এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে কর্মক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা ১১৩ জন ও আহত শ্রমিকের সংখ্যা ৭৫ জন এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা ৭৯২ জন ও আহত শ্রমিকের সংখ্যা ১৪৩ জন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৪ সালে পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ ৫২২ শ্রমিক প্রাণ হারান ও আহত হন ৫২ জন, ১৪৮ জন দিনমজুর নিহত হন ও আহত হন ৭২ জন। এছাড়াও নির্মাণ খাতে নিহত ৬২ জন এবং আহত পাঁচ জন, কৃষিখাতে শ্রমিক মৃত্যুর সংখ্যা ৬১ জন ও আহত এক জন। মৎস্য খাতে নিহত ২৫ ও আহত ১০ জন। পোশাকশিল্পে নিহত পাঁচ ও আহত ২৯ জন, বিভিন্ন সেবাখাতে নিহত ২৪ ও আহত এক জন, জাহাজভাঙা/শিপব্রেকিংয়ে নিহত ১১ ও আহত ৬ জন, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে নিহত ছয় ও আহত তিন, নিরাপত্তা খাতে নিহত পাঁচ ও আহত দুই, গৃহকর্মী নিহত পাঁচ ও আহত ১১, চা শ্রমিক নিহত এবং অন্যান্য খাতে ২৮ জন শ্রমিক নিহত ও আহত ৩৬ জন।
প্রতিবেদনে কর্মস্থলে হতাহতের উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, অগ্নিকাণ্ডে ভবন বা স্থাপনা থকে পড়ে যাওয়া, বজ্রপাত, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, গৃহশ্রমিকদের ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন, দেয়াল-ভবন ছাদ ধসে, বন্যপ্রাণীর আক্রমণ, ও ভূমিধসের কথা বলা হয়েছে।
কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে ওশি ফাউন্ডেশনের সুপারিশগুলো হচ্ছে-শ্রম আইন ও বিধি-মালার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা। শ্রম আইন অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে মালিক শ্রমিক প্রতিনিধি সমন্বয়ে সেফটি কমিটি গঠন। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের পরিবারকে এককালীন ১০ লাখ টাকা এবং আহত শ্রমিককে পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা দেয়া। সকল সেক্টরে ‘সেফটি অডিট’ চালু করা।
সরকারিভাবে কর্মক্ষেত্রে দুর্যটনা সংক্রান্ত তথ্যের সঠিক ডাটাবেজ তৈরি। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে দুর্ঘটনায় নিহত/আহত শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্তি।শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালকে আধুনিকায়ন। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ পিপিই ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। স্বাস্থ্যগত ও নিরাপত্তা নীতিমালা সম্পর্কে শিল্প মালিক ও ব্যবস্থাপকদের অবহিতকরণ এবং পেশাগত ব্যাধি নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল চালু করা।
বাংলাদেশ ওশি (অক্যুপেশনাল সেইফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট) ফাউন্ডেশন এ সুপারিশগুলো তুলে ধরেছে।