চলমান করোনার প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহণ মালিকদের ব্যাংক ঋণের কিস্তি স্থগিত, সুদ মওকুফ ও আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ পরিবহণ মালিক সমিতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে এ প্রস্তাব পাঠানো হয়। এতে সন্ত্রাসীদের অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, পরিবহণ খাতে ব্যাংক ঋণের কিস্তি স্থগিত ও ঋণের সুদ মওকুফ করলে এ খাতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন। এ জন্য সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দিয়েছি। সেখান থেকে প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ পরিবহণ মালিক সমিতির হিসাবে করোনায় সারা দেশে পরিবহণ চলাচল বন্ধ ছিল ৬৬ দিন। এতে দৈনিক কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। ওই হিসাবে পরিবহণ খাতে মোট ক্ষতি হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনের সময় রাজনৈতিক সন্ত্রাসীরা ৭টি গাড়িতে আগুন দিয়ে ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে করোনায় পরিবহণ খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ০৬ শতাংশ। অর্থাৎ, করোনায় এ খাতের প্রবৃদ্ধি খেয়েছে দশমিক ৬৩ শতাংশ। এসব ক্ষতির বিষয়টি সামনে এনে পরিবহণ মালিক সমিতি বেশ কিছু সুবিধা চেয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। সেখানে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ইতঃপূর্বে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে গণপরিবহণ খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। সেখানে আরও বলা হয়, এরইমধ্যে দ্বিতীয় করোনার ঢেউ চলছে। এতে গাড়ির ব্যবসা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে ব্যাংক ঋণ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ইতঃপূর্বে ব্যাংক থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গাড়ির ঋণের কিস্তি কর্তন বন্ধ রাখা হয়। এটি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল রাখতে হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘদিন পুরো দেশে গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ ছিল। এতে মালিকপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ব্যাংক ঋণের কিস্তি, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান ও যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ আর্থিক সংকটে পড়েছে। এ খাতে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হলে সংকটমুক্ত হতে পারবেন উদ্যোক্তারা। চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘নভেল করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের ব্যাংক ঋণের কিস্তি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত স্থগিত রাখা এবং ঋণের ওপর সুদ মওকুফের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।’
এ ছাড়া করোনা ছাড়াও সম্প্রতি ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ১২ নভেম্বর ঢাকায় চলাচলরত অবস্থায় সন্ত্রাসীরা আটটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। এ ব্যাপারে গাড়ির ক্ষয়ক্ষতি বাবদ ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা চেয়ে আবেদন করেছে মালিকপক্ষ।