নতুন করে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের জোয়ার শুরু হয়েছে ইসরায়েলে। আর এ প্রবাহ ঠেকাতে দেশজুড়ে ফের কঠোর লকডাউন আরোপ করেছে দেশটির সরকার। শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ২টা থেকে এ লকডাউন শুরু হয়েছে। খবর ইসরায়েল হায়োম।
করোনা প্রতিরোধে এর আগে গত মার্চে দেশব্যাপী লকডাউনের বিধিনিষেধ জারি করে ইসরায়েল সরকার। সে লকডাউনের কারণে দেশটির অর্থনীতি যথেষ্টই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় আবার লকডাউনের মতো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া কতটুকু যুক্তিসংগত হচ্ছে, সে বিষয়ে দেশটিতে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। অনেকে এ সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক প্রভাবজনিত বলে মনে করছেন।
কিন্তু ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক প্রফেসর হেজি লেভি এ ধারণাকে একেবারে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘একে কীভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলা যায়, যখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এত বেশিসংখ্যক কভিড-১৯ রোগী সংকটপূর্ণ অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে? এতে রাজনীতির কী আছে? কেউ কি জনসমাগম বন্ধ করা ছাড়া করোনা মহামারী মোকাবেলার অন্য কোনো উপায় বাতলে দিতে পারবেন? আসলে অন্য কোনো উপায় এ মুহূর্তে নেই। জনগণের প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে। ঠিক একইভাবে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকারও তো রয়েছে।’
লকডাউনের কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে—সমালোচকদের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘এই যে ৫০-৬০ হাজার রোগীকে হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে হচ্ছে, এতে কি অর্থনীতির ওপর কোনো প্রভাব পড়ছে না? কেউ যদি এমনটি মনে করে থাকেন, তবে তিনি ভুল করছেন। আসলে আমরা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। করোনা মোকাবেলায় সব দেশই লকডাউনের বিধিনিষেধ আরোপ করতে বাধ্য হচ্ছে।’
কবে নাগাদ লকডাউন প্রত্যাহার করা হতে পারে—এমন এক প্রশ্নের জবাবে লেভি বলেন, ‘সেটি নির্ভর করছে কখন করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসছে। আমার মনে হয় না দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে রোগীর সংখ্যা কমবে। আমার মতে, অন্তত তিন সপ্তাহের জন্য লকডাউন চালিয়ে যাওয়া উচিত। এর পরের পরিস্থিতি অনুযায়ী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের ন্যাশনাল করোনাভাইরাস কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর রনি গ্যামজু স্বীকার করেছেন, নতুন করে লকডাউন আরোপের ফলে অর্থনীতির অপরিসীম ক্ষতি হবে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার মতে করোনা কেবিনেটের উচিত ছিল বিদ্যমান নির্দেশনাগুলোকে আরো কঠোর করা, দেশজুড়ে লকডাউন আরোপ করা নয়। কিন্তু কেবিনেট দ্বিতীয় পথটিই বেছে নিয়েছে এবং আমি তাদের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
তবে দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইজহার শ্যায় এত নমনীয়তা দেখাননি। কঠোর ভাষায় সরকারের সমালোচনা করেছেন তিনি। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘সরকারের মন্ত্রীদের এটা জানা জরুরি যে গত মার্চের চেয়ে কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্তটি করোনাভাইরাস কেবিনেটের বৈঠকে নেয়া হয়নি।’
জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলে এ পর্যন্ত মোট ২ লাখ ১২ হাজার ১১৫ জন কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ১ হাজার ৩৭৮ জন। চলতি মাসের শুরু থেকে সেখানে দৈনিক সংক্রমণ শনাক্ত হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার দেশটিতে ছয় হাজারের বেশি নতুন কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে।