ব্যস্ত নগরীতে একটু প্রশান্তির জন্য জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে (ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন) বেড়াতে আসেন রাজধানীবাসী। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মিরপুরে অবস্থিত এই উদ্যানে দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ। এ পরিস্থিতিতে বাগানের গাছপালা বেড়ে উঠছে। উদ্যানের ভেতরে প্রায় ৮০ হাজার উদ্ভিদ রয়েছে। এখানে এলে দেশের দুর্লভ ও বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ চোখে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, করোনার কারণে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে প্রবেশের সব ফটক বন্ধ রাখা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা ব্যতীত সবার প্রবেশ নিষেধ। মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে চারপাশে তাকালে দেখা যায়, বড় গাছগুলো যেন আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে। ফুলে ফুলে ভরে গেছে ছোট-বড় অনেক গাছ। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সেগুলো আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। দাবদাহ কাটিয়ে সজীবতা ফিরে পেয়েছে গাছগুলো। মৃদু বাতাসে পত্রপল্লব যেন নাচছে। ফুলের ম-ম গন্ধ বাতাসে মিশে শরীর-মন সতেজ করে দিচ্ছে।
উদ্যানের ভেতর হাঁটার পথে ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়ে আছে। লাল, সাদা, নীল ও হলুদসহ বিভিন্ন রঙের ফুলের পাপড়িতে ভরে গেছে রাস্তাগুলো। তারা যেন দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
অন্যদিকে ছোট-বড় অনেক গাছে নানা ধরনের মৌসুমি ফল ধরেছে। তার সঙ্গে পাখিদের কলরবে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে উদ্যানে। অনেক জায়গায় মৌসুমি ফলের গাছগুলোতে অধিক পরিমাণে ফল হওয়ায় ভারে গাছ নুইয়ে পড়েছে। প্রজাপতি, পাখি ও বন্যপ্রাণীরা বাগানের ভেতরে মনের আনন্দে দিন কাটাচ্ছে।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সালে ২১৫ দশমিক ২২ একর জমির ওপর এ উদ্যান গড়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে ৮০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ১ হাজার ৭২ প্রজাতির বৃক্ষ। তার মধ্যে ৩৪৫টি দেশি ও ৬৬৫টি বিদেশি জাতের। এগুলোর মধ্যে দুর্লভ ও বিলুপ্তপ্রায় নানা প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এসব উদ্ভিদগুলো ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে।
এর বাইরে রয়েছে তিন প্রজাপতি বাগান, কৃত্রিম জলাপ্রপাত, কৃত্রিম দ্বীপ, নার্সারি, নেটঘর, ফার্ন হাউজ, অর্কিড ঘর, ক্যাকটাস ঘর, গোলাপ বাগান, শীতকালীন মৌসুমি ফুলের বাগান, গ্যালারি, বিশেষ বাগান, ছোট-বড় জলাশয়, ভিজিটর ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার, ফ্লাওয়ারিং ক্লাইম্বার টানেল, মসজিদ, গ্রন্থাগার, টিস্যুকালচার গবেষণাগার।
আরও রয়েছে ৭১টি অর্কিড এবং ৭৫টি ক্যাকটাস প্রজাতি, ৩০০ প্রজাতির গোলাপ গাছ, ১৫০ প্রজাতির ঔষধি গাছ এবং ১৫ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ। এর বাইরে ১৮৩ প্রজাতির পাখি, ১৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী এবং ১৫টি সরীসৃপ ও উভচর প্রজাতি রয়েছে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে। ৮৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর তত্ত্বাবধানে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের পরিচালক হক মাহবুব হোসেন বলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর থেকে উদ্যানে দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। দর্শনার্থীর প্রবেশ বন্ধ থাকায় এখানে একটি বন্য পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ফুলে ফলে বাগান ভরে উঠেছে। কেউ বৃক্ষের ডালপালা নষ্ট বা ক্ষতি করছে না বলে সেগুলো নিজেদের মতো করে বেড়ে উঠছে। এতে অক্সিজেনের প্রবাহ বেড়ে যাচ্ছে। বিশাল এ উদ্ভিদ উদ্যানটি পরিচর্যার জন্য পর্যপ্ত জনবল সঙ্কট থাকলেও সবাই দায়িত্ব নিয়ে নিজের কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে গবেষণার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদের কাজ। এখানে সেই পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এসে গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত দেশি-বিদেশি বিরল প্রজাতির উদ্ভিদের প্রজনন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা পেলে আবারও এ উদ্যান পরিদর্শনে দর্শনার্থী প্রবেশ চালু করা হবে।