আমেরিকান প্রকৌশলী উইলিস হ্যাভিল্যান্ড ক্যারিয়ার। তাকে আধুনিক এসির জনক হিসেবে মনে করা হয়। ১৯০২ সালে তিনি প্রথম বৈদ্যুতিক এয়ার কন্ডিশনার আবিষ্কার করেন। যার চাহিদা এখন তুঙ্গে। কী শহর কী গ্রাম- প্রখর এই দাবদাহে কোথাও এসি ছাড়া বাঁচা মুশকিল।
এত গুরুত্বপূর্ণ এই এসি বা এয়ার কন্ডিশনার আসলেই কি ঠান্ডা বাতাসে দেহ-মন-হৃদয় শীতল করার জন্য তৈরি হয়েছিল? নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এটি তৈরি করা হয়েছিল?
জানা যায়, মূলত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য এসি প্রস্তুত করা হয়েছিল। খাবার সংরক্ষণ ও ছাপাখানার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণই ছিল এসি তৈরির মূলে। বাড়িতে এসি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয় ১৯২০ সালের পর।
এসি তৈরির ইতিবৃত্ত থেকে জানা যায়, প্রকৌশলী উইলিস হ্যাভিল্যান্ড একটি ছাপাখানায় কাজ করতেন। সেখানকার বাতাসের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার কারণে ঠিকঠাক কাজ করা যাচ্ছিল না। তখন উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মূলত এসির নকশা করা হয়েছিল।
বাতাসের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ছাপা কাগজের আকার ও কালির যথার্থ ব্যবহার ঠিক রাখতেই প্রথমদিকে এসির ব্যবহার শুরু হয়। প্রকৌশলী হ্যাভিল্যান্ড এসি তৈরিতে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ কৌশল প্রয়োগ করেন। আগের প্রতিষ্ঠিত যান্ত্রিক হিমায়নের ধারণার ওপর ভিত্তি করে হ্যাভিল্যান্ডের এসি ঠান্ডা পানি ভরা কয়েলের মাধ্যমে শীতল বাতাস পাঠাতে থাকে। এরপর ১৯০৬ সালে এসির জন্য আমেরিকান সরকারের পেটেন্ট পান হ্যাভিল্যান্ড।
হ্যাভিল্যান্ড ও ছয় প্রকৌশলী মিলে ১৯১৫ সালে বিশ্বের বৃহত্তম এসি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘ক্যারিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ১৯২৬ সালে ঘরবাড়িতে এসির ব্যবহার শুরু হয়।
টমাস মিগলি জুনিয়র ফ্রেয়ন আবিষ্কারের মাধ্যমে ১৯২৮ সালে আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক কাজে মানুষের জন্য নিরাপদ এসি উদ্ভাবন করেন। আর বাণিজ্যিকভাবে এসি উৎপাদনের চাহিদা বৃদ্ধি পায় ১৯৪৬ সাল থেকে।
এর আগে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে প্রাচীন মিসরীয়দের সময় থেকেই মানুষ চিন্তা-ভাবনা করে এসেছে।
এসি উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করেন মার্কিন বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন। তিনি ১৭৫৮ সালে হিমাঙ্কের তাপমাত্রা অর্জনের জন্য বাষ্পীভবন ও অ্যালকোহল নিয়ে পরীক্ষা চালান। ১৮২৪ সালে তরল অ্যামোনিয়া বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বাতাসকে শীতল করার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। ১৮৪০ সালে উচ্চ তাপমাত্রা থেকে নগরবাসীকে বাঁচাতে ফ্লোরিডার শহরগুলোকে শীতল করার একটি ধারণা প্রস্তাব করেন পদার্থবিদ জন গরি।
তথ্যসূত্র: স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন