এমবিবিএস (ব্যাচেলর অব মেডিসিন, ব্যাচেলর অব সার্জারি) বা বিডিএস (ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি) ডিগ্রিধারী ছাড়া নামের আগে কেউ ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবে না বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (১২ মার্চ) বিচারপতি রাজিক আল জলিল ও বিচারপতি সাথীকা হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।
একই সঙ্গে, আদালত স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইনটি নিশ্চিত করে যে, শুধুমাত্র এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রিধারী ব্যক্তিরাই এই পদবি ব্যবহারের অধিকারী।
হাইকোর্টের এই রায়টি অনেককেই আলোড়িত করেছে, কারণ এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয় ছিল এবং দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিতর্ক চলছিল। আদালত বলে, এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রি না থাকলে আর কেউ নামের আগে ‘ডাক্তার’ উপাধি ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে রায়ে বলা হয়, যাদের এই পদবি এখন পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। অর্থাৎ, যারা এর আগে ‘ডাক্তার’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, তাদের এই রায়ের আওতায় শাস্তি বা শৃঙ্খলাবদ্ধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না।
এই মামলার পটভূমি হলো— ২০১০ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন প্রণীত হয়। এই আইনে বলা হয়েছিল, ‘ডিএমএফ’ (ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি) ডিগ্রিধারীদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করা যাবে না। তবে, এই আইনটি কিছু জায়গায় বৈষম্যমূলকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। বিশেষত, ‘ডিএমএফ’ ডিগ্রিধারী চিকিৎসকরা মনে করছিলেন যে, তারা দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা পেশায় যুক্ত থাকার পরেও ‘ডাক্তার’ উপাধি ব্যবহার করতে পারছেন না। এর ফলে তারা আইনের ২৯ ধারার বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
২০১৩ সালে প্রথম রিটটি দাখিল হয়, যা পরে দুইটি পৃথক রিটে ভাগ হয়ে আদালতে আসে। প্রথম রিটটি ছিল মূলত আইনটির বৈষম্যমূলক প্রয়োগ নিয়ে। দ্বিতীয় রিটটি ২০২২ সালে দায়ের করা হয়, যাতে আইনের ২৯ ধারার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারির শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় দেয় এবং ১২ মার্চ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। আদালত জানায়, এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রি না থাকলে আর কেউ ‘ডাক্তার’ উপাধি ব্যবহার করতে পারবেন না এবং এটি একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এছাড়া, আইনের ২৯ (১) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি ‘ডাক্তার’ শব্দ ব্যবহার করেন এবং তার সেই যোগ্যতা না থাকে, তাহলে তা একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে। পাশাপাশি, একবার অপরাধ করলে দ্বিতীয়বার পুনরাবৃত্তি করলে আরও বড় জরিমানা এবং শাস্তি হতে পারে।
এই রায়ে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের পক্ষ থেকে উত্থাপিত দাবি ছিল, নামের আগে ‘ডাক্তার’ ব্যবহার করার ব্যাপারে কোনো আপত্তি থাকা উচিত নয়, যদি সেই ব্যক্তির কাছে কোনো স্বীকৃত চিকিৎসা শিক্ষা না থাকে।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন শুনানি করেছেন, এবং প্রথম রিটের পক্ষে আইনজীবী মো. সাইদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ এম সাইফুল করিম শুনানি করেন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের পক্ষে আইনজীবী কাজী এরশাদুল আলম এই শুনানিতে ছিলেন।