চড়া মূল্যস্ফীতি ভোগাবে এবারও

প্রতিবেদন বিশ্বব্যাংকের

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিনিয়োগ ও শিল্প খাতে ভাটার টানে এবারও মূল্যস্ফীতি থাকবে চড়া। ফলে গতি কমবে অর্থনীতির। এতে একদিকে মানুষের কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ কমে যাবে, বাড়বে ব্যয়। নিত্যপণ্যের চড়া দাম আগের মতোই ভোগাবে ভোক্তাদের। এক প্রতিবেদনে এমনই পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

সংস্থাটির ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ (বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা) শীর্ষক প্রতিবেদনের জানুয়ারি (২০২৫) সংস্করণে চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছর নিয়ে এ পূর্বাভাস তুলে ধরেছে।

সংস্থাটি বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১ শতাংশে নামতে পারে, যা গত জুনের পূর্বাভাসের চেয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশীয় বিন্দু কম।

একটি দেশের ভেতরে যত পণ্য ও সেবা উৎপাদিত হয়, তা–ই জিডিপি। আগের বছরের চেয়ে জিডিপি বৃদ্ধির হারকে বলা হয় প্রবৃদ্ধি। জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার মানে হলো, অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে যাওয়া। এতে আগের চেয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার কমে যায়। বেকার বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়। ব্যবসা–বাণিজ্য দ্রুতগতিতে না বাড়লে, কারখানায় উৎপাদন না বাড়লে মানুষের আয় বৃদ্ধির সুযোগ কমে যায়। দেশে তিন বছর ধরে মানুষের প্রকৃত আয় কমছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে

মানুষের আয় বেড়েছে ৮ শতাংশের কিছু বেশি। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম, অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ।

বাংলাদেশে সাধারণত ৬ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়। ২০২১–২২ অর্থবছরে হয়েছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০২২–২৩ অর্থবছরে তা কমে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে নামে। সর্বশেষ ২০২৩–২৪ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। যদিও দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে প্রকাশিত শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জিডিপি বাড়িয়ে দেখানো হতো।

বিশ্বব্যাংক যেমন জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কথা বলেছে, তেমনি ২০২৫ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির পাঁচটি ঝুঁকির কথা বলেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)। ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত তাদের বৈশ্বিক ঝুঁকি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তুলে ধরা ঝুঁকিগুলো হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া (বন্যা, তাপপ্রবাহ), দূষণ (বায়ু, পানি, মাটি), বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব এবং অর্থনৈতিক নিম্নমুখিতা (মন্দা, স্থবিরতা)। এই ঝুঁকি তারা চিহ্নিত করেছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের ওপর জরিপ করে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ অংশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি কমিয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশে নামতে পারে, যা আগের পূর্বাভাসের চেয়ে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশীয় বিন্দু কম। জ্বালানি সংকট ও আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন শিল্পে উৎপাদন কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলেছে। ফলে পণ্যের দাম বেড়েছে। এটা আবার মানুষের প্রকৃত আয় কমিয়ে দিয়েছে।

পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে গিয়েছিল। তবে দেশ দুটি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে আড়াই শতাংশ। নেপালও ভালো করবে। ভারতে ২০২৪–২৫ অর্থবছরে (এপ্রিল–মার্চ) জিডিপির প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাড়ে ৬ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ ছিল। প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে বিনিয়োগে মন্থরতা ও উৎপাদনশীল খাতে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায়।

বাংলাদেশে চলতি বছর জিপিডির প্রবৃদ্ধি কমলেও আগামী অর্থবছরে (২০২৫–২৬) তা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার হতে পারে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পরিস্থিতির আরও উন্নতির আশা আছে। সঙ্গে আর্থিক খাতে সংস্কার হতে পারে, ব্যবসার পরিবেশে উন্নতি হতে পারে এবং বাণিজ্য বাড়বে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি কমবে, বিনিয়োগ বাড়বে।

বিশ্বব্যাংক যেমন জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কথা বলেছে, তেমনি ২০২৫ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির পাঁচটি ঝুঁকির কথা বলেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, ২০২৫–২৬ অর্থবছরে ভারতে ৬ দশমিক ৭, পাকিস্তানে ২ দশমিক ৮, শ্রীলঙ্কায় (২০২৫) ৩ দশমিক ৫ এবং নেপালে ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

Comments (0)
Add Comment