`এখন টিম ম্যানেজমেন্ট দেখলে মনে হয় একটা রিহ্যাব সেন্টার’

ম্যাচের একদিন পার হয়ে গেল কতো কথা শুনলাম যার অনেক কিছুরই যুক্তি আছে। কারণ দল হেরে গেলে মানুষ তার প্রতিক্রিয়া নিজের মতো করে দিবে এটা স্বাভাবিক। আমার মনেও অনেক কিছুই এসেছে তবে দুইটা জিনিস খুব বেশি মনে হচ্ছে, ম্যাচটা হারার জন্য কি শুধুই রিয়াদ আর লিটনই দায়ী আর কোনো বিষয় কি নাই। আমার যে বিষয়টি মনে হয়েছে সেটা হলো-

১. ম্যাচের ৯.৪ ওভার ৭৯ রানে ওদের ৪ উইকেট ঠিক তখন আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ড্রিংক্স ব্রেক তার মানে কোচ মাঠের ভিতর আসবে। আমাদের কোচ ও এসেছিল তাহলে উনি এসে রিয়াদের সাথে কি কথা বলেছিল। যদি বলে থাকে তাহলে কি সব দায় রিয়াদের? মানলাম অন ফিল্ড ক্যাপ্টেন কল ইজ ফাইনাল। তবে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের ক্রান্চ মোমেন্টে কি কোচ ডিক্সাশন করে না, কারণ ক্যাপ্টেন তখন বিভিন্ন বিষয়ে চাপে থাকে। তার প্লান কী- এটা কি জানতে চেয়েছিল কোচ? আর যদি কথা হয়ে  থাকে তাহলে কি কোচের প্রেস হ্যান্ডেল করা উচিত ছিল কিনা?

কারণ রিয়াদের ভুলটা ধরা হয়েছে ঠিক ওই সময় থেকেই। কারণ ১১ নাম্বার ওভার করে মেহেদী দলের মুল বোলার, ১২ নাম্বার ওভার করে রিয়াদ সম্ভবত ৫/৬ রান দেয়। ১৩ নাম্বার ওভার করে আফিফ যে ওভারে ১৫ রান হয়। কিন্তু রিয়াদ যে চিন্তা থেকে আফিফকে বলে এনেছিল সেটাতেও কিন্তু সুযোগ তৈরি হয়েছিল। যদি সুযোগ হাতছাড়া না হতো তাহলে আমরা বলতাম  দারুন ক্যাপ্টেনসি। ক্যাচ মিসের অজুহাত না দিলেও এটাই সত্য ক্যাচ মিস এই প্রথম হয়নি। আর লিটন দলের সেরা ফিল্ডারদের একজন। কোনো কোনো সময় ভাগ্যটাও সাথে থাকতে হয়।

তাহলে স্রেফ দল সফল না হওয়ার কারণে এই দুজনকে এতোটা তুলোধুনো করা কতোটা ঠিক আমি শিওর না। আর ঠিক এ কারণেই আমার মনে হয়েছে, যদি কোচ এ বিষয়ে রিয়াদের সাথে কথা না বলে থাকে তাহলে তো ব্রেকের সময় দলের টিম বয়কেই মাঠে পাঠিয়ে দেওয়া যায় হায়-হ্যালো করতে। কোচের আর প্রয়োজন কি।

২. ম্যাচের আগে উইকেট অ্যাসেস শুধু ক্যাপ্টেন করে না। পুরো টিম ম্যানেজমেন্ট সাথে থাকে, তাহলে টিম করার সময় চিন্তা করেছে উইকেট স্লো হবে যার কারণে তাসকিনকে বসিয়ে নাসুমকে খেলানো। কিন্তু নাসুমকে পাওয়ার প্লের পর বোলিং করানো হলো না। কারণ দুজন বাহাতি ব্যাটসম্যান ইউকেটে তাহলে আগেই চিন্তা করা উচিত ছিল শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডারে বাহাতি ব্যাটসম্যান বেশি তার উপর মাঠের একপাশে মাত্র ৫৬ গজ।

যখন নাসুমকে নেওয়া হয়েছে তাহলে ব্রেকের সময় কোচ রিয়াদকে কি বলেছে যে, নাসুম দলের মুল বোলার ওকে ব্যাক করো। কারণ ওই নাসুমই ব্রেকটা পরে দিয়েছে; ততোক্ষণে ম্যাচ প্রায় শেষ। তাহলে ওই সময় কোচ কি বসে বসে কোনো প্ল্যান না করে শুধু খেলা দেখেছে? আবারও বলছি সিদ্ধান্ত রিয়াদ নেবে, কিন্তু ওকে তো হেল্প করতে হবে। কারণ মাঠে ক্যাপ্টেন কখনও কখনও অসহায় হয়ে পড়ে। আর ঠিক তখনই টিম ম্যানেজমেন্টকে টেকঅফ করতে হয়। অন্যান্য দলে তো তাই দেখি।

৩. আরও অনেক বিষয় আছে বলা যায়, তবে লিটন ক্যাচ মিসের কোন এক্সকিউজ দেব না। এমনকি লিটন নিজেও দিবে না। তবে ক্যাচ মিস খেলার একটা অংশই। কিন্তু ফিল্ডিং কোচের কাছে কি এ বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাওয়া হয়? ক্যাচ মিস কি এই প্রথম হলো? ২০১৯ বিশ্বকাপের পর ম্যানেজমেন্ট এর প্রায় সবাই চাকরি হারিয়েছে স্রেফ বর্তমান ফিল্ডিং কোচ ছাড়া। তাহলে আমরা বিশ্বকাপে বা তারপর কি সেরা ফিল্ডিং সাইড হয়ে গিয়েছি?

এখন টিম ম্যানেজমেন্ট দেখলে মনে হয় একটা রিহ্যাব সেন্টার যেখানে সাউথ আফ্রিকার সব চাকরি না পাওয়া কোচগুলো একসাথে আমাদের রিহ্যাব সেন্টারে চাকরি করছে। এদের বাদ দেওয়া আরও বিপদ, কারণ চুক্তির পুরো টাকাটা নিয়ে চলে যাবে। তাহলে দাঁড়াল কি, তারা যতদিন থাকবে আর মন যা চাইবে তাই করবে। হেড কোচ এক এক করে নিজ দেশের সবাইকে আনছে। এরপর যারা অস্থায়ীভাবে আছে, তাদেরও সরাবে আর নিজের মতো করে ম্যানেজমেন্ট সাজাবে। তাও মেনে নিলাম কিন্তু রাসেল (হেড কোচ) ম্যানেজমেন্ট এর জন্য যেভাবে স্টেপআপ করে, মূল দলের জন্য তাহলে লুকিয়ে কেন? কেন তামিম, মুশফিক, রিয়াদ ভালো থাকে না?এটা ঠিক করা কি তার কাজ না?

তারপরও দায় খেলোয়ারদেরকেই নিতে হয়/হবে। এটাই স্বাভাবিক কারণ মাঠে তারাই খেলে। কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার যে, খেলোয়ারদেরকে সেরকম পরিবেশ করে দিতে হবে। তাদের কে বুঝাতে হবে তাদের বিপদে কেউ পাশে না থাকুক অন্ততো টিম ম্যানেজমেন্ট থাকবে। আমি আমার ক্যাপ্টেন্সির শেষ প্রেস কনফারেন্সে বলেছিলাম, এই দলের কোচ যেই হোক না কেন এখন এই দলের রেজাল্ট করার সময়; এক্সপেরিমেন্টের না। কোচের চাহিদা মেটানোর আগে আমাদের দেশের স্বার্থ আগে দেখতে হবে। কারণ ক্রিকেট দেশের মানুষের কাছে এখন স্রেফ খেলা নয়; রীতিমতো আবেগে পরিণত হয়েছে। ভালো করুক আমার প্রিয় দল। আল্লাহ সহায় হোন আমাদের।

– মাশরাফি বিন মুর্তজার ফেসবুক পোস্ট

Comments (0)
Add Comment