এখনও সরবরাহ হয়নি ২২ কোটি পাঠ্যবই, পড়াশোনা ব্যাহত

শিক্ষাবর্ষের এক মাস পেরিয়ে গেলেও সব শিক্ষার্থী সব বই পায়নি। নবম শ্রেণিতে বইয়ের সংকট বেশি। এতে পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। অবশ্য, এবার শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জনের কারণে বই ছাপার কাজ দেরি হচ্ছে। আবার দরপত্র, অনুমোদন, চুক্তির মতো কাজগুলোও যথাসময়ে না করায় এবং কাগজ ও আর্ট কার্ডের সংকটের কারণেও দেরি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার মূল ফটকে দাঁড়িয়ে ছিল মাধ্যমিকের কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী। নতুন বই পেয়েছে কি না জানতে চাইলে তারা বলল, এখনও সব বই পায়নি। পড়াশোনা করো কীভাবে? বলল, পুরনো বই দিয়ে। আবার কেউ কেউ বাইরে থেকে কিনে নিয়ে পড়ছে। ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্র বলল, সে এখন পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি ও গণিত—এই তিনটি বই পেয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে মোট বই ১৩টি।

বিদ্যালয়টির প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা একজন শিক্ষক বললেন, প্রাথমিক স্তরের সব বই পাওয়া গেছে। আর মাধ্যমিকে নবম বাদে অন্য শ্রেণিগুলোতে তিন থেকে চারটি বিষয়ের বই পাওয়া গেছে। কিন্তু নবম শ্রেণির অনেকে বই পাননি।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া মিলেনিয়াম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাতুমনি চাকমা জানান, ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব বই পেয়েছে। আর সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পেয়েছে তিনটি করে। কিন্তু নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একটি বইও পায়নি। বই না পেয়ে পিডিএফ (অনলাইন ভার্সন) দিয়ে ক্লাস করানো হচ্ছে।

শুধু রাজধানী ও পার্বত্য জেলার এই দুটি বিদ্যালয়ই নয়, শিক্ষাবর্ষের এক মাস পেরিয়ে গেলেও সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থী এখনো সব বই পায়নি। এর মধ্যে নবম শ্রেণিতে বইয়ের সংকট বেশি। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোনো বই পায়নি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বইয়ের অভাবে বিদ্যালয়ে ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছে না। ব্যাহত হচ্ছে পড়াশোনা।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সূত্রমতে, নতুন শিক্ষাবর্ষে চার কোটির মতো শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৪০ কোটি ১৫ লাখ বই ছাপানো হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ২২ কোটি বই এখনো সরবরাহ হয়নি। মাধ্যমিকে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) বইয়ের সংখ্যা ৩০ কোটি ৯৬ লাখের মতো। এর মধ্যে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত মাধ্যমিকের ১১ কোটি ১৭ লাখ ৮১ হাজার ২৪২টি পাঠ্যবই ছাড়পত্র বা সরবরাহ হয়েছে। তবে সরবরাহসহ ছাপা হয়েছে ১৪ কোটি ১৭ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৫টি। এর মানে হলো ১৯ কোটি ৭৮ লাখের মতো বই এখনো সরবরাহ হয়নি। আর ছাপার হিসাব করলে প্রায় পৌনে ১৭ কোটি বই ছাপা বাকি।

মাধ্যমিকে বেশি পিছিয়ে রয়েছে নবম শ্রেণির বই ছাপার কাজ। এই শ্রেণিতে মোট বইয়ের সংখ্যা ৬ কোটি ২৮ লাখের মতো। এর মধ্যে ছাপা হয়েছে ১ কোটি ৮১ লাখের কাছাকাছি।

তবে মাধ্যমিকের তুলনায় প্রাথমিকের ছাপা ও বিতরণের পরিস্থিতি ভালো। প্রাথমিকের মোট পাঠ্যবই ৯ কোটি ১৯ লাখের মতো। এর মধ্যে ছাড়পত্র হয়েছে ৭ কোটি ৩ লাখের বেশি। এখনো সোয়া ২ কোটি বই সরবরাহ হয়নি।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানিয়েছেন, তারা চেষ্টা করছেন ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বই সরবরাহ করতে। এর মধ্যে প্রাথমিকের অধিকাংশ বই বিতরণ হয়ে গেছে। দশম শ্রেণির বইয়ের ছাপার কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির সব বই দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আর নবম শ্রেণির বই ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, নতুন শিক্ষাক্রম বাদ দেওয়া হয়েছে। তাই এ বছর যারা দশম শ্রেণিতে উঠেছে, তাদের এখন বিভাগ-বিভাজন হচ্ছে। কেবল এই শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। এ জন্য এবার তাদের দশম শ্রেণিতে নতুন বই দেওয়া হচ্ছে।

Comments (0)
Add Comment